আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৭] :: গ্রাফটিং এর মাধ্যমে বনসাই চারা উৎপাদন।

আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই? আমি বরাবরের মত ভালো। 

কিছু কথা বলে নিই হয়তো পরে এ কথা গুলো বলার সুযোগ আর হবে না। আমি বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজে উদ্ভিদবিঞ্জান ৩য় বর্ষে পড়াশুনা করছি। আসলে উদ্ভিদবিঞ্জান বিষয়ে পড়তে হচ্ছে আমার বাবা মধ্যবিত্ত হবার কারনে । আমার সত্যিকার অর্থে প্রচন্ড আগ্রহ টেকনোলজির দিকে। বাবার টাকা থাকলে হয়তো কোন ইন্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তাম। আসলে এই একটা কারনে ক্লাশের প্রতি আমার মনোযোগ অত্যান্ত কম কারন আমি যা হতে চেয়েছিলাম আমার সে স্বপ্ন পূরন হয়নি কখনও হয়তো আর হবে না্। আমার সেই অধরা স্বপ্ন সারা জীবন অধরাই থেকে যাবে।

বনসাই নিয়ে আমার অভিঙ্গতা বেশ পুড়নো। কলেজে HSC দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেই বনসাই নিয়ে চর্চা শুরু করি। তবে তখন সামান্য ঞ্জানের কারনে সফল হতে পারিনি। বাংলায় অনেক ওয়েব রিছার্স করেও সঠিক পথ খুজে পাইনি। যা পেয়েছি তা ছিল অতি সংক্ষিপ্ত ও শুধু ধারনা মাত্র। কিন্তু প্রকৃত বনাই শিল্পি হতে গেলে এই সামান্য ধারনায় কিছুই হবে না। বিস্বাস করবেন কি না জানিনা, সেই ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্তও আমার শেখা শেষ হয় নি। আমি এখানে এখনও একজন ছাত্র।

আর এসব কথা মাথায় আসতেই চিন্তা করি বনসাই নিয়ে একটা ধারাবাহিক লেখা শুরু করব। সে কারনেই এ লেখা টা শুরু করা। অনেক পর্ব লিখতে হবে তাই আপনাদের সব সময় পাশে পাবো এই আশায় থাকলাম।

বাজে কথা অনেক বলেছি আর নয়।

বনসাই নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে ও আমার আগের পর্ব গুলো মিস করেছেন তারা নিচে থেকে দেখে নিন।

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০১] :: বনসাই পরিচিতি

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০২] :: বনসাই এর প্রকারভেদ চমৎকার সব ছবি সহ

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৩] :: বনসাই এর জন্য উপযুক্ত গাছ নির্বাচন

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৪] :: টব সংগ্রহ ও টবের মাটি তৈরি

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৫] :: বনসাই ট্রেনিং এর জন্য উদ্ভিদ উৎপাদন প্রক্রিয়া

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৬] :: যেভাবে কাটিং হতে নতুন উদ্ভিদ তৈরি করবেন

আজ এই ধারাবাহীকের ৭ম পর্বে আপনাদের দেখাব কি করে গ্রাফটিং এর মাধ্যমে বনসাই চারা উৎপাদন করা যায়। তাহলে চলুন শুরু করা যাক...

গ্রাফটিং বীজ অথবা কাটিং হতে বনসাই তৈরি শুরু করা এবং পূর্বে থেকে জন্মানো উদ্ভিদ থেকে বনসাই তৈরি করা এ দুইয়ের মাঝে সংযোহ স্হাপন করে। গ্রাফটিং করা খুব কঠিন কাজ নয় তবে এতে দক্ষতার প্রয়োজন। আর এ দক্ষতা পর্যাপ্ত অনুশীলনের মাধ্যমে সহযেই অর্জন করা সম্ভব।

গ্রাফটিং এর জন্য উদ্ভিদকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।

১) স্টক উদ্ভিদঃ যে উদ্ভিদের মূলতন্ত্র বা কান্ডের সাথে অন্য উদ্ভিদের জোড়া লাগানো হবে তাকে স্টক উদ্ভিদ বলে।

২) সায়নঃ যে কাটিংটিকে স্টক উদ্ভিদের সাথে জেড়া লাগানো হবে তাকে বলে সায়ন।

যখন একটি গ্রাফটিং সম্পুর্ণ ভাবে সফল হয় তখন সায়টি স্টকের মূলতন্ত্রকে ভিত্তি করে নতুন উদ্ভিদে পরিনত হয়।

গ্রাফটিং এর মূলমন্ত্রঃ একটি সফল গ্রাফটিং এর জন্য স্টক ও সায়ন উভয়ের ক্যা্িবয়াম বলয়ের একত্রিকরন প্রয়োজন যা ছাড়া গ্রাফটিং সম্ভব না। এটিই হল গ্রাফটিং এর মূলমন্ত্র।

স্টক ও সায়ন এর ক্যাম্বিয়াম বলয় একত্রে

গ্রাফটিং এর জন্য দরকার একাগ্রতা চটপটে ও দ্রত হাত চালানোর অভ্যাস। আর নিয়মিত অধ্যায়নের মাধ্যমে তা সহযেই অর্জন করা যায়।

আমি এখানে আপনাদের সাথে “ভিনিয়ার এর গ্রাফটিং” পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। কারন এটি সব থেকে সহজ তম গ্রাফটিং পদ্ধতি গুলোর একটি। সেইসাথে যারা প্রথম বারের মত গ্রাফটিং করতে চান তাদের জন্য এ পদ্ধতি খুবই সহয ও বোধগম্য হবে বলে আসাকরি। 

কাজের ধারাঃ

প্রয়োজনীয় উপকরনঃ

১) আপনার নির্ধারিত সায়ান উদ্ভিদ

২) আপনার নির্ধারিত স্টক উদ্ভিদ (একই গোত্রের হলে ভালো হবে)

৩) প্রুনিং কাচি

৪) গ্রাফ্ট টেপ বা পলিথিন হলেও হবে ( তবে পলিথিন নিলে সুতা ও নিতে হবে)

৫) মোটা কাগজের তৈরি সাপোর্ট

গ্রাফটিং এ প্রয়োজনীয় উপকরন

কর্মপদ্ধতিঃ

  • প্রথমেই সায়ান উদ্ভিদ হতে পেনসিলের সমান পুরু সায়ান কেটে নিন ও সায়নের কাটা মাথাটি চেছেঁ মসৃন ও তির্যক করুন। নিচের চিত্রে A
  • এরপর আপনার স্টক উদ্ভিদের মাটি হতে সামান্য উপরে তির্যক ভাবে কেটে নিন।  নিচের চিত্রে B
  • এবার সায়নের কাটা মাথা ম্টকের তির্যক ভাবে কাটা মাথাতে এমন ভাবে স্থাপন করেন যাতে উভয়ের ক্যাম্বিয়াম বলয় পরস্পরের সংপর্ষে আশে। নিচের চিত্রে C
গ্রাফটিং এর ধাপ

 

  • এবার স্টকের সাথে সায়নকে প্রথমে কাগজের সাপোর্ট দিয়ে তারপর গ্রাফ্ট টেপের সাহায্যে বা পলিথিন ও সুতার সাহায্যে পেচিয়ে দিন।

কিছুদিনের মাঝেই সায়নের উপরীভাগ হতে নতুন কুরি গজাতে শুরু করবে।
গ্রাফটিং নিয়ে কিছু কথাঃ 
অন্যান্ন পদ্ধতির তুলনায় গ্রাফটিং যদিও কিছুটা ঝামেলার তবে এর কিছু বিশেষত্ব আছে।
যেসব উদ্ভিদে কাটিং হতে মূল গজায় না ও যাদের বীজ হতে সহযে চারা গজায় না বা গজাতে অনেক সময় লাগে তাদের গ্রাফংি করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ও সময় সাস্রয় হয়।
অথবা আপনার কাছে যদি কোন দূর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ থাকে তবে আপনি গ্রফটিং এর মাধ্যমে খুব সহয়ের তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারেন।
সাধারনত একই ধরনের দুটি উদ্ভিদের মধ্যে গ্রাফটিং করা হয় যেমন পাইনের সাথে পাইনের। তবে আপনি চাইলে এক গাছের সাথে আরেক গাছেরও গ্রাফ্ট করতে পারেন।
পরিশেষেঃ
একটি খারাপ গ্রাফটিং একটি বনসাই বা অন্য উদ্ভিদের সৌন্দর্য সহজেই নষ্ট করতে পারে। তাই গ্রফ্ট এর সংযোগ স্থল এমন হতে হবে যাতে সেখানে জোড়াতে কোন ক্ষত না থাকে ও দেথে বোঝা না যায়। তাহলেই বনসাই বা উদ্ভিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
অনেক বড় লেখা লিখতে হয়েছে। বানানের ভূল ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ও আমাকে উৎসাহ প্রদান করবেন বলে আশা করি। সবাই ভালো থাকবেন।
আপনাদের যে কোন সমস্যার ব্যাপারে আমার সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করতে পারেন।

Level 0

আমি শাকিল আহম্মেদ শিমুল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 46 টি টিউন ও 122 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি শাকিল আহম্মেদ শিমুল। আমি খুব সহজ এবং তার চেয়েও বেশী সাধারন একজন মানুষ ।..তবে মনের ভুলে মাঝে মাঝে কিছু অসাধারন কাজ অবস্য করে ফেলি। তবে তা কি ভাবে করি নিজেই জানিনা। নতুন প্রযুক্তির প্রতি আমার প্রবল আকর্ষন নবাগত যে কোন প্রযুক্তিই ভালোলাগে তাই সারা জীবন কাটাতে চাই প্রযুক্তির সাথে।...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

আমি খুব ছোট বেলায় ফুলের চাষ করতাম, খুব শখ ছিল আমার ফুল নিয়ে। আর প্রকৃতি আমি ভিশন ভালোবাসি। তখন আমার ফুলের গাছগুলো খুব বড় হয়ে যেতো। যা আমার খুব খারাপ লাগতো। আমি খুব চাইতাম কাছগুলো ছোট কেন হয় না।
তখন অবশ্য বনসাই নিয়ে ঐভাবে জানতাম না। পরে কিছু ইংরেজি আর্টিকেল পড়ে ধারণা নেওয়া। তবে এই নিয়ে ব্যতিক্রম টিউন দেখে ভালোই লাগলো। এতো এক ভিন্ন প্রযুক্তি।
** চালিয়ে যান, সময় করে আবার গবেষণা করতে সুবিধা করবে। বনসাই (জাতীয়) ফুলের শুভেচ্ছা থাকছেই। 🙂

Level 0

চালিয়ে যান, ধন্যবাদ।