আপনার জীবনবৃত্তান্ত (CV) তৈরীর আগে যে সকল বাস্তবতার দিকে নজর রাখবেন

১ একজন চাকুরীদাতা গড়ে একটি জীবনবৃত্তান্ত (CV)-এর উপর ৩০ সেকেন্ডের বেশী সময় দেয় না ৷ সুতরাং এটি হতে হবে সংক্ষিপ্ত ৷ তথ্যগুলোর উপস্থাপন হতে হবে সুস্পষ্ট ৷ অপ্রয়োজনীয় বা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিহার করতে হবে ৷

২ একজন অনভিজ্ঞ/সদ্য পাস করা চাকুরীপ্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত এক থেকে দুই পাতার বেশী হওয়া কোনভাবেই উচিত্
নয় ৷

৩ আপনার জীবনবৃত্তান্ত হচ্ছে আপনার নিজেকে বিপণন করার মাধ্যম ৷ সুতরাং এটি হতে হবে আকর্ষণীয় ৷ তবে চটকদার কোন কিছু যেমন রঙিন কাগজ বা রঙিন কালি ব্যবহার করবেন না ৷ কোন কিছু Highlight করতে হলে সেটিকে Bold, italic বা underline করতে পারেন ৷

৪ মনে রাখবেন, আপনার জীবনবৃত্তান্তের মধ্যে যদি কোন বানান ভুল বা ভাষাগত/Grammatical ভুল থাকে তবে সম্ভাব্য চাকুরীদাতার আপনার সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারণা হবে ৷ এটি প্রকাশ পাবে যে আপনি কোন কাজই নির্ভুল ভাবে করতে সক্ষম নন ৷ সুতরাং একটি CV তৈরীর পর সেটি নিজে ভাল করে পড়ুন এবং শুদ্ধ ইংরেজী জানেন এমন ব্যক্তিকে দেখিয়ে নিন ৷

৫ যখন আপনি কোন নির্দিষ্ট চাকুরী বিজ্ঞপ্তির (job announcement)-এর বিপরীতে আবেদন করার জন্য জীবনবৃত্তান্ত পাঠাবেন, তখন চেষ্টা করুন আপনার CV সেই চাকুরীর চাহিদা অনুযায়ী তৈরী করতে (Customize your CV) ৷ এর জন্য প্রয়োজন চাকুরী বিজ্ঞপ্তি ভাল করে পড়া এবং প্রতিষ্ঠানটি সম্বন্ধেকিছু গবেষণা (Research) করা ৷ উদাহরণ স্বরুপ আপনি যদি জানেন যে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের যে কোন স্থানে নিয়োগ দিতে পারে, তাহলে আপনি আপনার CV-তে উল্লেখ করতে পারেন আপনি বাংলাদেশের কোন কোন স্থানে পূর্বে অবস্থান করেছেন ৷ অথবা কোন নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এমন কোন লোক খুঁজছে যার একজন ‘ সংগঠকের (organizer’) ভূমিকা পালন করতে হবে, সেই ক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার ছাত্রজীবনের কোন সাংগঠনকারীর ভূমিকা উল্লেখ করেন তবে আপনা CV নিয়োগকারীর কাছে আলাদা মূল্য পাবে৷

৬ এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার CV তে সঠিক তথ্য দিবেন ৷ এমন কোন তথ্য দিবেন না যা আপনার Job interview-তে ভুল প্রমানিত হতে পারে ৷

জীবনবৃত্তান্তের (CV) বিভিন্ন অংশঃ

একটি জীবনবৃত্তান্তে (CV) যে তথ্যগুলো আপনি সুবিন্যস্ত ভাবে উপস্থাপন করবেন সেগুলো হচ্ছে-
* শিরোনাম (Title)
* সার সংক্ষেপ (Career Summary) --> অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের জন্য বেশী প্রয়োজন ৷
* ক্যারিয়ার উদ্দেশ্য (Career objective)-->সদ্য পাশ করা চাকুরী প্রার্থীদের জন্য বেশী প্রয়োজন ৷
* চাকুরির অভিজ্ঞতা (Experience)
* শিক্ষাগত যোগ্যতা (Education)
* অতিরিক্ত তথ্য (Additional Information)
* ব্যক্তিগত তথ্য (Personal Information)
* রেফারেন্স (Reference)

শিরোনাম: (Title)

জীবনবৃত্তান্তের শুরুতেই থাকবে আপনার পুরো নাম ৷ এটা বোল্ড (bold) হবে এবং একটু বড় ফন্টে লিখতে হবে(ডাক নাম পরিহার করুন) ৷ তার পর থাকবে আপনার ঠিকানা (বর্তমান ঠিকানা যেখানে আপনাকে চিঠি দিলে আপনি পাবেন), ফোন নম্বর ও ই-মেইল এড্রেস ৷ এই অংশটুকু পৃষ্ঠার উপরে মধ্যখানে থাকবে, যাতে তা প্রথমেই চোখে পরে ৷

Career Summary( সার সংক্ষেপ )

যে সকল ব্যক্তিদের ৪-৫ বছরের বেশী চাকরীর অভিজ্ঞতা আছে তাদের জন্য এটি বেশী প্রযোজ্য ৷ এই অংশে আপনি সর্বোচ্চ ৬-৭ লাইনে উল্লেখ করুন আপনার পূর্ব চাকরীর অভিজ্ঞতার কর্মক্ষেত্রগুলো ৷ আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতার সাফল্যগুলো (Achievement) সংক্ষেপে তুলে ধরুন (যদি থাকে) ৷

Career Objective

এটি বেশী প্রযোজ্য সদ্য পাশ করা চাকুরী প্রার্থী বা অল্প অভিজ্ঞ (১ / ২ বছর) চাকুরী প্রার্থীদের জন্য ৷ এই অংশে আপনি আপনার চাকুরীক্ষেত্রে বর্তমান লক্ষ্য (Immediate goal) উল্লেখ করুন এবং আপনার যোগ্যতা কিভাবে বিজ্ঞপ্তির (Advertised) চাকুরী বা যে প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন, তার প্রয়োজন মেটাতে পারে তার প্রেক্ষিতে উপস্থাপন করুন ৷ চাকুরীর জন্য উপযুক্ত ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষিপ্তভাবে উলেখ করুন ৷ চাকুরী বিজ্ঞপ্তি বা কোম্পানির প্রয়োজনের সাথে খাপ খাইয়ে Career Objective লেখা জরুরী ৷ আপনি কোম্পানিকে কি দিতে পারবেন তার ওপর গুরুত্বারোপ করুন, কোম্পানির কাছ থেকে আপনি কি আশা করছেন তার ওপর নয় ৷

Experience: (কর্ম অভিজ্ঞতা)

অভিজ্ঞ পেশাজীবিদের জন্য এই অংশটি শিক্ষাগত যোগ্যতার আগেই আসা উচিত ৷ সদ্য পাশ করা বা অল্প অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে আগে শিক্ষাগত যোগ্যতা (Education) এবং তার পরে experience আসা উচিত৷

যে সকল তথ্য আপনার প্রতিটি পূর্ব অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে উল্লেখ করবেন সেগুলো হচ্ছে,

* Organization name (প্রতিষ্ঠানের নাম)
* Designation (পদবী)
* Time period- From & To (সময়কাল)
* Job responsibility (দায়িত্ব)
* Special achievement (উল্লেখযোগ্য সাফল্য):

আপনি যদি একই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে কাজ করে থাকেন, তাহলে আলাদা আলাদা ভাবে তা উল্লেখ করুন ৷

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি প্রথমেই উল্লেখ করবেন আপনার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা
(most recent experience), তার পরে এক এক করে
Resume Chronological Order-এ একটির পর একটি অভিজ্ঞতা উল্লেখ করবেন যা শেষ হবে আপনার সর্বপ্রথম অভিজ্ঞতা দিয়ে ৷

আপনার খুব কম গুরুত্বপূর্ণ বা কম সময়ের অভিজ্ঞতা উল্লেখ না করাই ভাল ৷ তবে লক্ষ্য রাখবেন যে আপনার List of experience এর মধ্যে যাতে খুব বেশী Time gap না থাকে ৷

Education & Training (শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ):

আগেই বলা হয়েছে যে এই অংশটি সদ্য পাশ করা বা অল্প অভিজ্ঞদের জন্য Experience অংশের আগেই আসা উচিত্ ৷ Education অংশে আপনি আপনার ডিগ্রিগুলোর নাম উল্লেখ করবেন এবং নিম্নেবর্ণিত তথ্য প্রদান করবেন ৷

* ডিগ্রির নাম (যেমন: SSC, HSC, BCom)
* কোর্স সময়কাল (কবে থেকে কবে)
* শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বোর্ডের নাম ৷
* পরীক্ষার বছর এবং প্রয়োজনে ফলাফল প্রকাশের সময় ৷
* ফলাফল/Result এবং যদি উল্লেখযোগ্য সাফল্য (যেমন: মেধাতালিকায় স্থান) থাকে তবে তার উল্লেখ করতে হবে ৷

Experience-এর মতো এক্ষেত্রেও আপনি আপনার সবচেয়ে সাম্প্রতিক ডিগ্রির উল্লেখ আগে করবেন এবং তার পর পর্যায়ক্রমিক ভাবে বাকিগুলো উল্লেখ করবেন ৷ লক্ষ্য রাখবেন আপনার কোন ডিগ্রির চূড়ান্ত ফলাফল এখনও প্রকাশ না হয়ে থাকলে সেই ডিগ্রির উল্লেখ করার সময়
ব্র্যাকেটে ‘Appeared’ উল্লেখ করবেন ৷ কোন কোর্সে অধ্যায়নরত থাকলে ‘Ongoing’ উল্লেখ করুন৷কোন ডিগ্রির ক্ষেত্রে আপনার Result যদি খুব খারাপ হয়ে থাকে তবে কোন Result-ই উল্লেখ করার দরকার নেই ৷মনে রাখবেন একটি ডিগ্রির ফলাফল উল্লেখ করা ও অন্যটি উল্লেখ না করা দৃষ্টিকটু ৷ আপনি যদি কোন বিশেষ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং যদি তা আপনার কাজের যোগ্যতার সহায়ক বলে মনে করেন তবে তা উল্লেখ করবেন ৷ সেক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, Topics, প্রতিষ্ঠানের সময় (Duration) তারিখ উল্লেখ করবেন ৷ প্রশিক্ষণের তালিকা আপনি Education অংশের নীচে দিতে পারেন ৷

অতিরিক্ত তথ্য / Additional Information:

যে সকল তথ্য উপরে উল্লেখিত অংশগুলোর মধ্যে পড়ে না কিন্তু চাকরির সাথে সম্পর্কিত তা এ বিভাগে বর্ণনা করুন-

* পেশাগত অর্জন / Professional Achievement
* পদক/ সম্মাননা/ Award.
* ভাষাগত দক্ষতা / Language Literacy
* কম্পিউটারে দক্ষতা / Computer Skills.
* লাইসেন্স,সরকারি পরিচয়পত্র, প্রকাশিত লেখা ও সত্বাধিকার
* স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ড ইত্যাদি

ব্যক্তিগত তথ্য / Personal Information-

এই অংশে পিতামাতা, বর্তমান/স্থায়ী ঠিকানা, ধর্ম, যে সকল দেশ আপনি ভ্রমণ করেছেন, শখ ইত্যাদি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ৷

রেফারেন্স (Reference):

খেয়াল রাখবেন Reference অংশে আপনি আপনার নিকট আত্মীয়দের নাম উল্লেখ করবেন না ৷ আপনাকে আপনার ছাত্র জীবনে বা কর্মজীবনে কাছ থেকে দেখেছে এমন ব্যক্তিকেই আপনি Reference হিসাবে উল্লেখ করবেন৷অবশ্যই যাদেরকে Reference দিবেন তাদের ফোন নাম্বার, ঠিকানা এবং ই-মেইল (যদি থাকে) উল্লেখ করবেন৷সাধারণত Reference হিসাবে সর্বোচ্চ ২-৩ জনের নাম উল্লেখ করাই শ্রেয় ৷ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে আপনি যাদেরকে Reference হিসাবে উল্লেখ করেছেন সে সকল ব্যাক্তিকে আপনার আগে থেকে জানাতে হবে যে আপনি তাদের Reference হিসাবে আপনার জীবনবৃত্তান্ত(CV)-তে উল্লেখ করেছেন ৷

এই রকম শিক্ষা বিষয়ক আরও অনেক পোষ্ট দেখতে ক্লিক করুন 

এই পোষ্টটি আগে প্রকাশিত হয়েছে আমার এই ওয়েব সাইটে 

আমার ওয়েব সাইটের ফেসবুক পেজ 

শিক্ষা বিষয়ক যে কোন পরামর্শের যোগাযোগ করতে পারেন, ফেসবুকে আমি 

ধন্যবাদ

Level 2

আমি atmzakaria। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 11 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

অনেক ভাল লাগলো ভাই , অনেক উপকারী টিউন

ak ta sample/screenshot dilee aro valo hoito.

MS-Word এ একটা Document করে দিলে ভাল হত |

Level 2

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ,এই পোষ্টটা আমার ওয়েবসাইটের ক্যারিয়র লাইন পেজে পাবেন।

Level New

আপনাকে ধন্যবাদ,আগামীতে আরো টিউন চাই .