সহজেই পাসওর্য়াড মনে রাখার জন্য জনপ্রিয় কিছু পাসওর্য়াড ম্যানেজার

বর্তমানে অনলাইনের যুগে আমাদের জীবনে পাসওর্য়াড বিষয়টি ওতপ্রত ভাবে জড়িয়ে আছে। কর্মাশিয়াল কিংবা ব্যক্তিগত উভয় জীবনেই পাসওর্য়াড একটি গুরুর্ত্বপূণ ভূমিকা পালন করে থাকে।  একটি ভালো পাসওর্য়াডের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থাকে। সেগুলো হলো: বিভিন্ন সার্ভিসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাসওর্য়াড ব্যবহার করা, ছোট-বড় অক্ষরের সাথে নাম্বার এবং স্পেশাল ক্যারেক্টারের মিশ্রণে একটি ইউনিক ধাঁচের পাসওর্য়াড তৈরি করা, একটি পাসওর্য়াড দীর্ঘদিন ব্যবহার না করা ইত্যাদি।

এখন আপনার ব্রেইনের মেমোরী ভালো না হলে এই সকল বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট পাসওর্য়াডগুলো মনে রাখার জন্য আপনি পাসওর্য়াড ম্যানেজার প্রোগ্রামগুলো ব্যবহার করতে পারেন। পাসওর্য়াড ম্যানেজার ব্যবহার করে আপনি আপনার সকল ডিভাইসের সকল ধাঁচের পাসওর্য়াডগুলোকে নিরাপদ ভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।

তবে সকল পাসওর্য়াড ম্যানেজার ব্যবহার করা কিন্তু নিরাপদ নয়। আজকের টিউনে লিডিং কিছু পাসওর্য়াড ম্যানেজার নিয়ে আলোচনা করতে আমি গেমওয়ালা চলে এসেছি আপনাদের জনপ্রিয় বাংলা টেকনোলজি ব্লগ টেকটিউনসে। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে সরাসরি টিউনের বিষয় বস্তুতে চলে যাই:

১) লাস্টপাস:

LastPass হচ্ছে বহুল জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত একটি পাসওর্য়াড ম্যানেজার। প্রায় সকল প্রকার ডিভাইসের জন্য ২০১৬ সালের শেষের দিকে এই প্রোগ্রামটিকে ফ্রি করে দেওয়া হলে এটি আরো জনপ্রিয়তা লাভ করে। তবে ফ্রি সফটওয়্যার হয়েও লাস্টপাস সফটওয়্যারটি কিছু ইউনিক সিকুরেটি ফিচার ব্যবহার করে তাদের পাসওর্য়াডগুলোকে সুরক্ষিত রাখার জন্য।

যেমন প্রোগ্রামটি একক মুখি সল্টেড হ্যাস PBKDF2-SHA256 ব্যবহার করে, যার ব্যবহারের কারণে ব্রুট ফোর্স এট্যাক করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এছাড়াও আপনার সংরক্ষিত পাসওর্য়াডকে হ্যাসের মাধ্যমে ভেরিফাই করে আপনার পিসিতেই এনক্রিপ্টশন করে রাখা হয়, পাসওর্য়াডগুলোকে কখনো লাস্টপাসের সার্ভারে ফরওয়ার্ড করা হয় না।

এজন্য অনলাইন হ্যাকের হাত থেকে আপনার পাসওর্য়াড অনেকটাই সুরক্ষিত থাকে। 256-bit AES এনক্রিপ্টশনের ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার পিসিকেই পাসওর্য়াড ভল্ট বানিয়ে ফেলা হয়। এছাড়াও লাস্টপাস এবং আপনার পিসির মধ্যকার সকল অনলাইন তথ্য আদান-প্রদানে SSL প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

২) ড্যাসলেন:

লাস্টপাসের সবথেকে বড় প্রতিযোগী সফটওয়্যার হচ্ছে Dashlane. ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া এই পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে রয়েছে নিজস্ব প্যাটেন্ট সিকুরিটি সিস্টেম। যেটার মাধ্যমে প্রোগ্রামটি তাদের ইউজারদের পাসওর্য়াডের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিয়ে থাকে। তাদের সিকুরিটি সিস্টেমকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো Data Ciphering এবং অন্যটি হলো User Authentication.

Data Ciphering এর মাধ্যমে ইউজারদের পাসওর্য়াড, পেমেন্ট ইনফরমেশন এবং পারসোনাল ইনফরমেশনগুলোকে সুরক্ষিত রাখা হয়। আর লাস্টপাসের মতোই ইউজারদের মাস্টার পাসওয়ার্ডগুলোকে ড্যাসলেন কখনোই তাদের সার্ভারে জমা রাখে না।

আর অন্যদিকে User Authentication এর মাধ্যমে ইউজারদের নতুন ডিভাইসের লগইন কে সুরক্ষিত রাখা হয়। আপনি পাসওর্য়াড ম্যানেজার হিসেবে এই প্রোগ্রামটিকেও ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

৩) কীপাস:

KeePass হচ্ছে একটি ওপেন সোর্স পাসওর্য়াড ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। অনান্য মাল্টি ডিভাইস, ক্লাউড বেইসড প্রোগ্রামের থেকে এই কিপাসটি আলাদা কারণ এটি সর্ম্পূণ একটি অফলাইন পাসওর্য়াড ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। অর্থাৎ KeePass আপনার সকল তথ্যকে আপনার পিসিতেই সংরক্ষিত করে রাখে।

আর বিভিন্ন ডিভাইসে ব্যবহার করতে চাইলে প্রোগ্রামটির পোর্টেবল সংস্করণ ব্যবহার করতে পারেন আপনি।  KeePass তাদের সিকুরিটির জন্য Argon2 এর SHA-256 ফিচারটি ব্যবহার করে থাকে। আর যেহেতু এটি একটি অফলাইন প্রোগ্রাম, তাই keylogger এর বিপক্ষে সিকুরিটি প্রদানের জন্য KeePass সিকিউর ডেস্কটপ নামের একটি আলাদা ফিচার দিয়ে রেখেছে আপনার জন্য। এটিকে একটিভ করার জন্য সফটওয়্যারের Tools>Options>Security তে গিয়ে পাবেন।

৪) কিপার:

Keeper হচ্ছে আরেকটি পাসওর্য়াড ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। সহজে ব্যবহারযোগ্য, বিভিন্ন ফিচার এবং সিকুরিটির জন্য ব্যবহারকারীদের কাছে দিন দিন এই প্রোগ্রামটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

এর একটি উল্লেখ যোগ্য ফিচার হচ্ছে  এর Zero Knowledge পলিসি। অর্থ্যাৎ Keeper সফটওয়্যার কোনো প্রকার এনক্রিপ্টশন বা ডিক্রিপ্টশন ব্যবহার করে না।  আর অনান্য পাসওর্য়াড ম্যানেজারের মতোই এটিও 256-bit AES ব্যবহার করে।

৫) স্টিকি পাসওর্য়াড:

Sticky Password হচ্ছে বর্তমান যুগের একটি অন্যতম লিডিং পাসওর্য়াড ম্যানেজার। এই প্রোগ্রামে  রয়েছে ওয়াই ফাই সিঙ্ক সিকুরিটি ফিচার। আপনার ডিভাইস এবং ক্লাউড সার্ভারে সিঙ্ক না করে Wi-Fi Sync এর মাধ্যমে একই নেটওর্য়াকের অন্তভূর্ক্ত ডিভাইসগুলোকে নিরাপদে সিঙ্কিং করা যাবে।

আর আপনি যদি ক্লাউড সিঙ্ক ফিচারটি ব্যবহার করতে চান তাহলে প্রবেশের সিকুরিটির জন্য আপনাকে মাস্টার পাসওর্য়াড এবং অনলাইন পাসওর্য়াড দুটোকেই প্রবেশ করাতে হবে।

বাজারে তো অনেক ধরনের অনেক ফিচার সমৃদ্ধ বিভিন্ন পাসওর্য়াড ম্যানেজার সফটওয়্যার রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে সিকুরিটি বিষয়টি সমান ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আজকের টিউনে উল্লেখিত ৫টি সফটওয়্যারগুলোকে আপনি নিশ্চিতে পাসওর্য়াড ম্যানেজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

তবে পাসওর্য়াড মনে রাখার জন্য ওয়ার্ড কিংবা এক্সেল ফাইলেও আপনি পাসওয়ার্ডগুলো লিখে সেভ করে রাখতে পারেন। তবে ম্যাক্সিমাম সিকুরিটির জন্য ভালো মানের পাসওর্য়াড ম্যানেজার ব্যবহার করা উত্তম। আজ এ পর্যন্ত ই। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

Level 10

আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Excellent Post

Last pass টাই বেস্ট