ব্যবসার অনলাইন দৃষ্টিকোণ অর্জনের জন্য ৮ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস

Level 4
শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর

বর্তমানে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি অনলাইন ইমেজ বা দৃষ্টিকোণ সফলতার পূর্বশর্ত। আপনি যদি অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা না-ও করেন তবুও আপনার ব্যবসার একটি অনলাইন ইমেজ থাকা জরুরি। যার মাধ্যমে গ্রাহক বা ক্রেতা আপনার ব্যবসা সম্পর্কে অবগত থাকবে। ফলে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার পণ্য বা সেবা গ্রহণ করতে পারবে।

সফল ও স্বনামধন্য কোম্পানি মানেই তাদের একটি সফল ইমেজ ক্রেতা সাধারনের সম্মুখে থাকতে হবে। আর বর্তমানে এই সফল দৃষ্টিকোণ অর্জনের জন্য অনলাইন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপায়। কেননা যে কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাইলে সম্ভাব্য ক্রেতা প্রথমেই অনলাইনে সার্চ করে তাদের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জেনে নেয়। অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে সন্তুষ্ট হলে তারপরে ক্রেতা একটি পণ্য বা সেবা ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

এক্ষেত্রে সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অনলাইন ইমেজ বা দৃষ্টিকোণ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। আজকের টিউনে আপনাদের এমন ৮ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস শেয়ার করবো যার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসায়ের একটি অনলাইন দৃষ্টিকোণ অর্জন করতে পারবেন। অর্থাৎ অনলাইনের মাধ্যমে নিজের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে একটি ব্রান্ডে পরিনত করতে পারবেন। তাহলে দেরি না করে চলুন এমন গুরুত্বপূর্ণ ৮টি টি টপস সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

১. একটি ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট তৈরি করুন

ওয়েবসাইট তৈরি করুন

আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি যদি অনলাইন ভিত্তিক না-ও হয়ে থাকে তবুও আপনার একটি ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট থাকা উচিত। এই ওয়েবসাইট হবে আপনার ব্যবসায়ের অনলাইন ঠিকানা। ওয়েবসাইটে আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সকল তথ্য সুন্দর ভাবে সাজানো থাকবে। ফলে যে কেউ আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করে বুঝতে পারবে আপনার প্রতিষ্ঠানটি কোন ধরনের পণ্য বা সেবা নিয়ে কাজ করছে। ফলে ব্যবসার পরিচিতি বাড়বে।

সেই সাথে ওয়েবসাইট এর ডিজাইন আকর্ষণীয় করতে হবে। দর্শক এনগেজড থাকবে এমন কনটেন্ট ওয়েবসাইটে রাখতে হবে। যাতে আপনার ওয়েবসাইট দেখে ক্রেতা সাধারণ একটি পজিটিভ ধারণা করতে পারে।

২. সোস্যাল মিডিয়া সাইটে ব্যবসায়িক প্রোফাইল তৈরি করুন

সোস্যাল মিডিয়া সাইটে ব্যবসায়িক প্রোফাইল

বাংলাদেশে ব্যবহৃত জনপ্রিয় সবগুলো সোস্যাল মিডিয়া সাইটে আপনার ব্যবসায়িক প্রোফাইল থাকা উচিত। যাতে লোকজন সব জায়গাতেই আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য খুঁজে পায়। মোটকথা আপনার ব্যবসায়িক কার্যক্রম প্রতিটি সোস্যাল মিডিয়া সেক্টরে ছড়িয়ে দিন। এতে করে লোকজন খুব সহজেই আপনার ব্যবসা সম্পর্কে জানতে পারবে।

একজন ক্রেতা যখন দেখবে ফেসবুকেও আপনার ব্যবসায়িক প্রোফাইল আবার ইনস্টাগ্রামেও এই প্রোফাইল আবার টুইটারে গিয়েও আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল তখন কিন্তু আপনার ব্যবসা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারনা সে পাবে। এভাবে আপনার ব্যবসা একটি অনলাইন দৃষ্টিকোণ অর্জন করবে।

৩. নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করুন

অনলাইনে নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করুন

আপনার ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট বা সোস্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। অর্থাৎ অনলাইন প্লাটফর্মে আপ টু ডেট থাকতে হবে। তাহলে সম্ভাব্য ক্রেতা আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা রাখতে পারবে।

ধরুন কোনো সম্ভাব্য ক্রেতা ২০২৪ সালে আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সার্চ করলো। কিন্তু আপনার প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখল লাস্ট আপডেট টিউন করা হয়েছে ২০২২ সালে। তখন কিন্তু ক্রেতা তার প্রয়োজনীয় হালনাগাদ তথ্যটি সংগ্রহ করতে পারবে না। বিনিময়ে আপনি একজন সম্ভাব্য ক্রেতা হারাবেন।

তাই একটি অনলাইন দৃষ্টিকোণ অর্জন করতে চাইলে অনলাইন প্লাটফর্মে প্রতিনিয়ত আপ টু ডেট থাকা অত্যন্ত জরুরি।

৪. প্রফেশনাল লোগো তৈরি করুন

প্রফেশনাল লোগো তৈরি

দেখবেন কোনো কোম্পানির লোগো বার বার আমাদের সামনে ঘোরাঘুরি করলে সেটা কিন্তু মনে গেঁথে যায়। আমরা মনে রাখতে পারি এই নামে কোনো একটি প্রতিষ্ঠান আছে। ফলে প্রয়োজন পড়লে অনলাইনে ঐ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সার্চ করি। সার্চ করার পর প্রতিষ্ঠানের লোগো দেখে খুব সহজেই তাদের সনাক্ত করতে পারি। তাহলে বুঝতেই পারছেন একটি প্রফেশনাল লোগো কতোটা জরুরি

একটি ইউনিক ও আকর্ষণীয় লোগো অনলাইন প্লাটফর্মে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার প্রতিষ্ঠানকে আলাদা ভাবে প্রেজেন্ট করবে। ফলে আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনের মাধ্যমে একটি ব্রান্ডে পরিনত হবে।

৫. আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি করুন

কনটেন্ট তৈরি

যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের একটি অনলাইন দৃষ্টিকোণ তৈরি করার জন্য ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইলকে জনসাধারণের টাইমলাইনে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এখন এই প্রতিযোগিতামূলক সময়ে কীভাবে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানকে টাইমলাইনে রাখবেন? এজন্য আপনাকে নিয়মিত আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি করতে হবে।

বর্তমানে কনটেন্ট এর ওপর ভিত্তি করে একটি অনলাইন প্লাটফর্ম এগিয়ে যায়। আপনার ব্যবসায়িক প্রোফাইলে এমন সব কনটেন্ট আপলোড করতে হবে যা লোকজন দেখে। ট্রেন্ডিং কনটেন্ট তৈরি করতে পারলে আপনার প্রতিষ্ঠানকে টাইমলাইন থেকে কেউ ফেলতে পারবে না।

একটি প্রতিষ্ঠান যদি নিয়মিত দর্শকের টাইমলাইনে জায়গা করে নিতে পারে তাহলে তো অনলাইন দৃষ্টিকোণ অর্জনের বিষয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে না। কেননা তখন আপনার প্রতিষ্ঠানের কথা লোকজনের মুখে মুখেই থাকবে।

৬. পেইড বিজ্ঞাপণ দিন

পেইড বিজ্ঞাপণ

ব্যবসায়ের প্রচারণার জন্য মাঝে মাঝে পেইড বিজ্ঞাপণ দিতে পারেন। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেইড বিজ্ঞাপণ দিলে আপনার ওয়েবসাইটটি সার্চ ইঞ্জিনে সবার ওপরে চলে আসবে। ফলে সম্ভাব্য ক্রেতা আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারবে। এভাবে পেইড বিজ্ঞাপণ এর মাধ্যমে আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান একটি অনলাইন দৃষ্টিকোণ অর্জন করতে পারে।

সোস্যাল মিডিয়ায় পেইড মার্কেটিং এর মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে আপনার প্রোফাইল তুলে ধরতে পারবেন। ফলে এখান থেকে আপনার প্রোফাইলে আরও বেশি লোকজন এনগেজড হবে। ফলে আপনার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রিয়তা বাড়বে। এভাবে অনলাইনে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারবেন।

৭. প্রোফাইলের ফলোয়ার বৃদ্ধি করুন

ফলোয়ার বৃদ্ধি

বর্তমানে অনলাইনে এতো এতো প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল যে লোকজন কোনটা রেখে কোনটা বিশ্বাস করবে বুঝে উঠতে পারে না। তাই কোনো প্রতিষ্ঠান কতোটুকু বিশ্বস্ত তা অনেকটা বিবেচনা করা হয় প্রোফাইলের ফলোয়ার সংখ্যা দিয়ে। ধরুন আপনার ব্যবসায়িক প্রোফাইল ঢুকে দেখল মাত্র ৫০০ ফলোয়ার আর আপনার প্রতিযোগী কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইলে আছে ৫ মিলিয়ন ফলোয়ার। তখন কিন্তু কেউ আর আপনার প্রতিষ্ঠানের কথা মনে রাখবে না।

তাই সম্ভাব্য ক্রেতার বিশ্বস্ততা অর্জন করতে হলে অনলাইন প্রোফাইলে ফলোয়ার বৃদ্ধি করা জরুরি। প্রোফাইল নিয়মিত হালনাগাদ করলে এবং গ্রহনযোগ্য কনটেন্ট আপলোড করতে থাকলে এমনিতেই ফলোয়ার বাড়তে থাকবে। তাছাড়া পেইড প্রমোশন এর মাধ্যমেও ফলোয়ার বৃদ্ধি করা যায়। ফলোয়ার বৃদ্ধি পেলে অনলাইনে বিশ্বস্ততা বৃদ্ধির পাশাপাশি আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল নিয়মিত ফলোয়ারের টাইমলাইনে রাখতে পারবেন৷

৮. সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে তা অনলাইনে তুলে ধরুন

সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ

বর্তমানে এই টেকনিক টি ব্যবহার করছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। তাই খুব সহজেই তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের একটি অনলাইন দৃষ্টিকোণ অর্জন করতে পেরেছে। সমাজের প্রতি সকল প্রতিষ্ঠানের কমবেশি দায়িত্ব রয়েছে। তাই আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনো সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা উচিত। আর সামাজিক কর্মকাণ্ডে যে সকল প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে তাদের প্রতি সাধারণ জনতার একটি পজিটিভ চিন্তাভাবনা তৈরি হয়।

আর বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে তা অনলাইন প্লাটফর্মে তুলে ধরতে পারলে তা আরও বেশি জনপ্রিয়তা পায়। অনেকে হয়তো আপনাদের একটি কল্যাণমূলক কাজকর্ম দেখার জন্যই আপনাদের সাথে অনলাইনে এনগেজড থাকবে। ফলে অনলাইনের মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানের একটি দারুণ ইমেজ তৈরি হবে। এভাবে আপনি আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অনলাইন দৃষ্টিকোণ অর্জন করতে পারবেন।

শেষকথা

একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে চাইলে বর্তমানে অনলাইন মাধ্যমের ওপর নির্ভর না করে উপায় নেই। কেননা অনলাইনের মাধ্যমেই এক একটা প্রতিষ্ঠান এখন ব্রান্ডে পরিনত হচ্ছে। তাই আপনার প্রতিষ্ঠানটি যদি অনলাইন ভিত্তিক না-ও হয়ে থাকে তবুও চেষ্টা করবেন একটি অনলাইন দৃষ্টিকোণ অর্জন করতে। ফলশ্রুতিতে অফলাইনে আপনার বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে। আশাকরি উপরোক্ত টিপস গুলো আপনার ব্যবসায়ের উন্নয়নের পথ সুগম করতে একটু হলেও কাজে লাগবে।

টিউনটি ভালো লাগলে একটি জোসস করে দিবেন প্লিজ। আর ব্যবসায়িক বিভিন্ন টিপস, অনলাইন আয় সম্পর্কিত বিভিন্ন টিউন পেতে আমাকে ফলো করে রাখতে পারেন। অন্য কোনো বিষয় সম্পর্কে জানার থাকলে অবশ্যই টিউনমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।

Level 4

আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 43 টি টিউন ও 26 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস