ডিজিটাল মার্কেটিং কে? কী? কেন? কীভাবে? [পর্ব-০৯] :: কীভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে হয়?

প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

ডিজিটাল মার্কেটিং কে? কী? কেন? কীভাবে?

আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। আজকে হাজির হলাম "ডিজিটাল মার্কেটিং কে? কী? কেন? কীভাবে?" এর ৯ম পর্ব নিয়ে। আজকে আমরা আলোচনা করব কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে হয়। বেশি কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

১. লক্ষ্য নির্ধারণ করা

আপনি যখন ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করতে যাবেন তখন আপনার প্রথম কাজ হবে লক্ষ্য সংজ্ঞায়িত করা এবং নির্ধারণ করা। আপনি আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী স্ট্রেটেজি তৈরি করবেন। যেমন আপনার লক্ষ্য যদি হয় ব্র‍্যান্ড এওয়ারনেস তৈরি করা তাহলে আপনাকে নতুন অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছানোকে গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন অডিয়েন্সে রিচ করতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন।

আপনার লক্ষ্য যদি থাকে সেলস বৃদ্ধি করা তাহলে আপনার কাজ হবে SEO তে ফোকাস করা এবং কন্টেন্ট এমন ভাবে অপটিমাইজ করা যেন অডিয়েন্স ওয়েবসাইটে আসে৷ একই সাথে পেইড এড এর মাধ্যমে ট্রাফিক আনতে PPC ক্যাম্পেইনও চালাতে পারেন।

সর্বোপরি আপনার গোল বা লক্ষ্য অনুযায়ী মার্কেটিং স্ট্রেটেজি অবলম্বন করবেন। আর লক্ষ্য স্পেসিফিক ভাবে আগে থেকে নির্ধারণ করা গেলে স্ট্রেটেজি তৈরি সহজ হয়।

২. টার্গেট অডিয়েন্স আইডেন্টিফাই করা

ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম একটি সুবিধা হল স্পেসিফিক অডিয়েন্স টার্গেট করা যায়। এই সুবিধা স্বাভাবিক ভাবেই ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এ পাওয়া যায় না। অডিয়েন্স টার্গেটিং বিশেষ কিছু সুবিধা পাওয়া যায় যা অডিয়েন্স টার্গেট না করলে পাওয়া সম্ভব না। তবে অডিয়েন্স অবশ্যই লক্ষ্য এবং নির্দিষ্ট পণ্য অনুযায়ী টার্গেট করতে হবে।

যেমন ইন্সটাগ্রামে অধিকাংশ অডিয়েন্স কিন্তু কম বয়সী যারা বিভিন্ন মিমস, ছবি, শর্ট ভিডিও পছন্দ করে অন্যদিকে, LinkedIn এর অডিয়েন্স একটু বয়স্ক এবং তারা বিভিন্ন প্রফেশনের সাথে যুক্ত। সুতরাং এই সোশ্যাল মিডিয়ায় কন্টেন্ট দেয়ার আগে অবশ্যই অডিয়েন্স বিবেচনা করতে হবে এবং লক্ষ্য অনুযায়ী টার্গেট করতে হবে।

৩. প্রতিটি চ্যানেলের জন্য আলাদা বাজেট তৈরি করা

আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রেটেজি কেমন হবে কোন কোন বিষয় থাকবে এর উপর বাজেট নির্ধারণ করতে হবে। আপনি যদি SEO, সোশ্যাল মিডিয়া, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, ওয়েবসাইট এর মত ইনবাউন্ড টেকনিক অবলম্বন করেন তাহলে আপনার জন্য খুশির খবর হচ্ছে বাজেট এত বেশি লাগবে না। ইনবাউন্ড মার্কেটিং টেকনিকে আপনি হাই কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরিকে গুরুত্ব দেবেন যা অডিয়েন্স গ্রহণ করবে।

আপনার বাজেট যদি টাইট থাকে তাহলে একটা হোস্টিং কিনুন এবং ফ্রি কোন CMS এর মাধ্যমে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করুন। আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করতে পারেন যেখানে কোন কোডিং জ্ঞান ছাড়াই আপনি Elementor এর মত পেইজ বিল্ডার দিয়ে চমৎকার ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলতে পারবেন।

অন্যদিকে আপনি যদি আউটবাউন্ড টেকনিক অবলম্বন করেন তাহলে আপনার খরচ বেশি হবে এবং বাজেট বাড়াতে হবে। এখানে ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য আপনাকে ইমেইল লিস্ট কিনতে হবে, আউটডোর বিজ্ঞাপণ যেমন বিলবোর্ডের খরচ তো আছেই।

আরেকটা উদাহরণ হতে পারে PPC এড। Google AdWords, এর যখন এই ধরনের এড রান করা হয় তখন একই ইন্ডাস্ট্রি এবং কিওয়ার্ডের অন্যান্য কোম্পানির সাথে বিড করতে হয় এটি যেমন কম টাকায়ও হতে পারে আবার কিওয়ার্ড অনুযায়ী অনেক টাকাও লাগতে পারে। এই দিক বিবেচনায় অর্গানিক সার্চ রেজাল্ট বা রিচ বেশি কার্যকর এবং এটি কম খরচে করা সম্ভব।

৪. ফ্রি এবং পেইড ডিজিটাল স্ট্রেটেজি ব্যালেন্স করা

ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রেটেজি অবশ্যই ফ্রি এবং পেইড উভয় কেন্দ্রিক হওয়া উচিৎ। যেমন আপনি ফ্রি মার্কেটিং এ প্রথমে বায়ারের পারসোনা বিল্ড করবেন, অডিয়েন্সের চাহিদা আইডেন্টিফাই করবেন, সে অনুযায়ী কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরি করবেন, কনভারসন হবে, এই প্রক্রিয়ায় রেজাল্ট পেতে আপনার ছয় মাসের মত টাইম লাগতে পারে। তবে এখানে যদি আপনি পেইড মার্কেটিংকেও অন্তর্ভুক্ত রাখেন তাহলে তুলনামূলক দ্রুত সময়ের মধ্যে রেজাল্ট পাওয়া সম্ভব।

আলটিমেটলি আপনার লক্ষ্য থাকবে দীর্ঘমেয়াদি রেজাল্টের জন্য, SEO, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অর্গানিক রিচ বৃদ্ধি করা তবে সন্দেহ দূর করার জন্য আপনি ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেলে পেইড মার্কেটিং চালাতে পারেন। যে চ্যানেলে পেইড মার্কেটিং এ ভাল রেজাল্ট আসে সেখানে পেইড মার্কেটিং কেই গুরুত্ব দিন।

৫. এনগেজিং কন্টেন্ট তৈরি করুন

যখন আপনি আপনার অডিয়েন্সকে চিনবেন এবং বাজেটও তৈরি করে ফেলবেন তখন আপনার কাজ হবে বিভিন্ন চ্যানেলের জন্য কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরি করা। কন্টেন্ট হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া Post, ব্লগিং আর্টিকেল, PPC এড, স্পন্সর কন্টেন্ট, ইমেইল মার্কেটিং নিউজলেটার ইত্যাদি৷

যে চ্যানেলের জন্যই তৈরি করেন না কেন আপনার কন্টেন্ট অডিয়েন্সদের কাছে এমন অবশ্যই চমকপ্রদ লাগতে হবে। কারণ এই কন্টেন্টই আপনার ব্র‍্যান্ড এওয়ারনেস বাড়াতে এবং লিড জেনারেট করতে সাহায্য করবে।

৬. ডিজিটাল মার্কেটিং এসেট গুলো মোবাইলের জন্য অপটিমাইজ করা

আপনাকে মনে রাখতে হবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান মোবাইল মার্কেটিং। যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯% ডিজিটাল কন্টেন্ট কনসিউম হয় স্মার্টফোনের মাধ্যমে। যেখানে ডেক্সটপ ইউজে কনসিউম হয় অর্ধেকের চেয়ে কম। সুতরাং আপনার এড, ওয়েবপেজ, সোশ্যাল মিডিয়া ইমেজ, অন্যান্য ডিজিটাল মার্কেটিং এসেস্ট মোবাইল ফোনের জন্য অপটিমাইজ করতে হবে। কোম্পানির নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ থাকাও ডিজিটাল মার্কেটিং এর অংশ।

যারা মোবাইল ডিভাইসে আপনার কোম্পানির সাথে যুক্ত আছে তারা যেন ডেক্সটপ এর মতই পজিটিভ এক্সপেরিয়েন্স পায় সেটাতে আপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন লিড জেনারেটের কোন কন্টেন্ট ডাউনলোডের ক্ষেত্রে মোবাইল ইউজাররাও যেন সহজে ডাউনলোড করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইমেজ শেয়ারের ক্ষেত্রে ইমেজটি এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যেন মোবাইলেও ঠিক মত দেখা যায়৷ কোন টেক্সট যেন ঢেকে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ডিজিটাল কন্টেন্ট মোবাইলের জন্য অপটিমাইজ করার অনেক পথ রয়েছে এবং এটা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং পরবর্তীতে যখনই ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করবেন সেটা মোবাইলের জন্যও সঠিক ভাবে অপটিমাইজ করুন।

৭. কিওয়ার্ড রিসার্চ করুন

ডিজিটাল মার্কেটিং এর আল্টিমেট গোল হচ্ছে টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছানো। আর কিওয়ার্ড রিসার্চ ছাড়া টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে পোঁছানো অসম্ভব।

ওয়েবসাইট অপটিমাইজেশন এবং SEO এর মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন র‍্যাংক করার জন্য কিওয়ার্ড বেশ জটিল একটা কাজ। কিওয়ার্ড রিসার্চের মাধ্যমে জানা যায় টার্গেট অডিয়েন্স কি ধরনের কন্টেন্ট চাচ্ছে এবং তাদের জন্য তৈরি করা কন্টেন্টে কোন কিওয়ার্ড গুলো অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ। সোশ্যাল মিডিয়া কিওয়ার্ড রিসার্চ আপনাকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় কন্টেন্ট মার্কেটিং করতে সাহায্য করবে।

আপনি SEO স্পেশালিস্ট না হলেও কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে পারেন। আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের সাথে রিলেটেড হাই পারফরম্যান্স কিওয়ার্ড গুলো লিস্ট করুন এবং সে অনুযায়ী কন্টেন্ট তৈরি করুন।

৮. এনালিটিক্স বিশ্লেষণ করুন এবং কাজ গুলো পুনরাবৃত্তি করুন

ফাইনালি, দীর্ঘমেয়াদি ইফেক্টিভ মার্কেটিং স্ট্রেটেজি তৈরি করতে আপনার কাজ গুলোর ফলাফল বিশ্লেষণ করতে হবে৷ যেমন কয়েক মাস পরে দেখা গেল অডিয়েন্সরা আপনার টুইটার কন্টেন্ট ঠিকই পছন্দ করছে কিন্তু ইন্সটাগ্রাম কন্টেন্টে তেমন রেসপন্স করছে না। এর মানে আপনাকে ইন্সটাগ্রামের স্ট্রেটেজি পরিবর্তন করতে হবে। আবার এমনও হতে পারে কয়েক মাস পরে দেখলেন অন্য চ্যানেলে অডিয়েন্স বেশি সময় দিচ্ছে, এ ক্ষেত্রে সেই সমস্ত চ্যানেলকে আপনার বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

আবার পুরনো ওয়েবপেজের ট্রাফিক কমে যেতে পারে। খুঁজে বের করুন সমস্যা কি এবং নতুন করে কন্টেন্ট ডেভেলপ করুন। অডিয়েন্স এখন যা চাচ্ছে সেটার সাথে কন্টেন্ট আপডেট করুন।

শেষ কথা

আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করতে চাইলে এই কাজ ধাপে ধাপে করতে পারেন। তবে আপনি যদি ইতিমধ্যে শুরু করে থাকেন তাহলে অবশ্যই বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করেছেন। যে ধাপ গুলো সম্পন্ন করেছেন সেগুলোর ফলাফল নিরূপণ করুন এবং সংশোধন বা ইম্প্রুভ দরকার হলে অবশ্যই নতুন করে চিন্তা ভাবনা করে ইম্প্রুভ করুন।

আশা করছি আজকের এই পর্বটি আপনাদের কাছে ভাল লেগেছে। মতামত থাকলে অবশ্যই জানান। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 568 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 112 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস