আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আজকে হাজির হলাম "ডিজিটাল মার্কেটিং কে? কী? কেন? কীভাবে?" এর তৃতীয় পর্ব নিয়ে। আজকের আলোচনা হবে ডিজিটাল মার্কেটিং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিটা বিজনেসের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং থেকে কয়েক গুণ বেশি অডিয়েন্স পাওয়া সম্ভব এই ডিজিটাল মার্কেটিং এ। ডিজিটাল মার্কেটিং এ কম খরচে, স্পেসিফিক ভাবে যারা প্রোডাক্ট সম্পর্কে আগ্রহী বা নিয়মিত প্রোডাক্ট ক্রয় করে, তাদের কাছে পৌঁছানো যায়। ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাকসেস রেট যেমন বেশি তেমনি কম ব্যয় বহুল।
সকল ধরনের ব্যবসায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব অনেক তবে স্পেসিফিক ভাবে কিছু উপকারী দিক উল্লেখ করলে বলা যায়,
আপনি যদি টিভিতে, ম্যাগাজিনে অথবা বিলবোর্ডে কোন বিজ্ঞাপণ দেন, সেটা কে দেখবে এই বিষয়টি আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। এটা ঠিক, আপনি একটি নির্দিষ্ট ডেমোগ্রাফিক এরিয়া বিবেচনা করে দেবেন, তবুও যাদেরকে বিজ্ঞাপনটি দেখাতে চাচ্ছেন তারা আসলেই দেখছে কিনা সেটাতে প্রশ্ন থেকেই যায়।
অপর পক্ষে আমরা যদি ডিজিটাল মার্কেটিং এর কথা ভাবি, এর মাধ্যমে আপনি স্পেসিফিক ভাবে অডিয়েন্সদের টার্গেট করতে পারবেন। আগ্রহ, রুচি, লোকেশন, বয়স, এবং লিঙ্গভেদে অডিয়েন্সদের কাছে আপনি প্রোমোশন মেসেজ পাঠাতে পারবেন।
সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন ধরনের অডিয়েন্স রয়েছে। যারা প্রতিনিয়ত তাদের খাদ্যাভ্যাস, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা, লাইফ-স্টাইল সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে শেয়ার করছে। আপনি তাদের কাছেও পৌছাতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়া বুস্টের মাধ্যমে যা ডিজিটাল মার্কেটিং এর অংশ।
তাছাড়া আপনি PPC এবং SEO স্ট্রেটেজির মাধ্যমেও বিজ্ঞাপণ রান করতে পারেন যা নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে আগ্রহী ব্যক্তির কাছে আপনার প্রোডাক্টকে পৌঁছে দেবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং আপনাকে অডিয়েন্স নিয়ে রিসার্চ করা এবং বায়ারদের পারসোনাল আইডেন্টিফাই করতে সাহায্য করবে। একই সাথে সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে প্রয়োজন মত স্ট্রেটেজি পরিবর্তনও করতে পারবেন। ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি বড় টার্গেট অডিয়েন্স থেকে ছোট ছোট সাব-গ্রুপ টার্গেট করেও প্রোডাক্টের প্রোমোশন চালাতে পারবেন। যদি আপনার মাল্টিপল প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের বিজনেস থাকে তাহলে এটি নিঃসন্দেহে আপনার জন্য দারুণ হতে পারে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি প্রতিদিন ক্যাম্পেইন গুলো ট্র্যাক করতে পারবেন এবং কত খরচ হচ্ছে, সেই তুলনায় ফলাফল আসছে কিনা জানতে পারবেন। যে চ্যানেলে আশা-বঞ্চক ফলাফল আসছে না সেই চ্যানেলের খরচ কমাতে পারবেন। এই সুবিধাটি আপনি কখনোই বিলবোর্ডের ক্ষেত্রে পারবেন না কারণ একবার বিলবোর্ড সেট করে ফেললে চাইলেও এটার খরচ কমবে না, সরিয়ে নতুন আরেকটা বসানোর আগ পর্যন্ত কোন পরিবর্তন করতে পারবেন না।
ডিজিটাল মার্কেটিং খরচ এর কন্ট্রোল থাকবে আপনার হাতে। ধরুন PPC ক্যাম্পেইনে আপনি ভাল ফলাফল না পেলে সেটা ত্যাগ করে ইন্সটাগ্রাম বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এড প্লেস করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার ভাল ডিজাইনিং সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে।
সর্বোপরি, ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে সাশ্রয়ী একটি সমাধান, এবং আপনি আপনার অর্থের বা সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার এখানে করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার বাজেট কম থাকে বা আপনার বিজনেসের পরিধি ছোট হয় তাহলেও ডিজিটাল মার্কেটিং আপনার জন্য সুযোগ রেখেছে। আপনি সোশ্যাল মিডিয়া, SEO, ব্লগে বিনিয়োগ করে ভাল রিচ পেতে পারেন।
এই তিন স্ট্রেটেজি ব্যবহার করে আপনি মিনিমাল স্পেন্ডে ভাল ROI পেতে পারেন।
ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ছোট বিজনেস কোম্পানি গুলো চাইলেও বড় কোম্পানি গুলোর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেতে পারে না। এর কারণ বড় কোম্পানি গুলো যেখানে টেলিভিশন এ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারে সেখানে ছোট কোম্পানি গুলো চাইলেও পারে না। তবে এই দিক থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং ছোট কোম্পানি গুলোকে ভাল সুযোগ দেয় যেখানে বিচক্ষণ স্ট্রেটেজি অবলম্বন করে বড় কোম্পানি গুলোকেও বিট করা যায়।
আপনি চাইলেই আপনার প্রোডাক্ট রিলেটেড লং টেইল কিওয়ার্ড গুলো আইডেন্টিফাই করে, সেগুলোর উপর হাই কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরি করে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারেন। আপনি খেয়াল করে দেখবেন কখনো কখনো কোন প্রোডাক্ট সার্চ দিলে বড় কোম্পানির আগে ছোট কোম্পানির রেজাল্ট আগে দেখায়।
সার্চ ইঞ্জিন গুলো সবসময় বড় ব্রান্ডকে কেয়ার করে না, সার্চ ইঞ্জিন দেখে কন্টেন্ট।
ডিজিটাল মার্কেটিং পরিমাপযোগ্য। মার্কেটিং এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মেট্রিক্স গুলো আপনি ট্র্যাক করতে পারবেন, সঠিক ফলাফল জানতে পারবেন। প্রতিটি ক্যাম্পেইন কত গুলো ইম্প্রেশন, শেয়ার, ভিউ, ক্লিক আসছে সব জানতে পারবেন। কোন ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন কিনা বুঝতে পারবেন। এটা ডিজিটাল মার্কেটিং এর বড় একটি সুবিধা আপনি কখনো ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এ পাবেন না।
ডিজিটাল মার্কেটিং, মার্কেটারদের রিয়েল টাইমে সঠিক রেজাল্টটি দেখাতে পারে। যেমন আপনি যদি পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপণ ছাপেন তাহলে কিন্তু জানতে পারবেন না কতজন সেই পেজ দেখেছে কত জন সেটি পড়েছে কিন্তু অনলাইন মার্কেটিং আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি সঠিক ভাবে ROI পরিমাপ করতে পারবেন। চলুন কিছু উদাহরণ দেখে নেয়া যাক।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি সহজেই জানতে পারবেন, কত জন আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করেছে। জানা যাবে রিয়েল টাইমে এই মুহূর্তে কতজন রয়েছে। এটা জানতে সাহায্য করবে Google Analytics বা HubSpot এর মত প্ল্যাটফর্ম গুলো।
একজন ইউজার কত গুলো পেজ ভিজিট করছে কোন ডিভাইস ব্যবহার করছে, কোথা থেকে এসেছে এগুলোও জানা যাবে। আর এসব ডেটার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কোন চ্যানেল থেকে বেশি অডিয়েন্স আসছে। কোন চ্যানেলে আপনার ইনভেস্টমেন্ট বাড়ানো উচিৎ। ধরলাম অর্গানিক সার্চ থেকে আপনার ট্রাফিক আসে মাত্র ১০% এর মানে হল আপনাকে SEO তে আরও ভাল ইনভেস্ট করতে হবে।
অফলাইন মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এটা জানা অসম্ভব যে তারা কিভাবে প্রোডাক্টের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে বা প্রোডাক্ট কিনছে। তাদের সাথে সরাসরি কথা না বলে এটা জানা সম্ভব না কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং আপনাকে সেই সুযোগটা দিচ্ছে।
ধরুন আপনি অফলাইনে মার্কেটিং করছেন, নিজের ব্র্যান্ড প্রোমোশনের জন্য ক্রেতাদের লেটারবক্সে পণ্যের প্রচারপত্র পাঠালেন। যেহেতু এটা অফলাইন সেহেতু আপনি চাইলেও কিন্তু জানতে পারবেন না কতজন এটা খুলে পড়েছে আর কত জন ছুড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে।
একই বিষয়টা যদি অনলাইনে করা হয়? আপনি সহজেই জানতে পারবেন সেটা কতজন ডাউনলোড করছে, যে পেজে আপলোড করেছেন সেখানে কতজন ভিজিটর এসেছে ইত্যাদি। তাছাড়া আপনি যদি ডাউনলোড এর আগে ফর্ম সেট করে রাখেন তাহলে সেখান থেকে লিডও জেনারেট করতে পারবেন।
উপযুক্ত টুল, টেকনোলজি এবং কার্যকর ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রেটেজি আপনার সেলকে স্ট্রেস করতে সহায়তা করবে। আপনি জানতে পারবেন কাস্টমাররা কোন ট্র্যান্ডকে ফলো করছে, কোন বিষয় গুলো ট্রেন্ডে আছে। এই বিষয়টিকে আমরা বলব এন্ট্রিবিউট মডেলিং।
এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কি কি বিবেচনায় নিয়ে কাস্টমাররা পণ্য ক্রয় করে, বিক্রয় বাড়ানোর জন্য কোন বিষয় গুলোতে পরিবর্তন আনতে হবে কোন বিষয় গুলোতে বেশি নজর দিতে হবে। সেলসের কোন সাইকেলকে আবার রিফাইন করতে হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটিং এবং সেলসের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। Aberdeen Group, এর মতে যেসব কোম্পানি এই দুই বিষয়ে শক্তিশালী সমন্বয় রাখতে পেরেছে তারা বছরে ২০% এর বেশি গ্রোথ পেয়েছে। অন্যদিকে দুর্বল সমন্বয়ের জন্য ৪% পর্যন্ত বিজনেস কমে গেছে অনেক কোম্পানির।
একটা সঠিক মার্কেটিং স্ট্রেটেজি তৈরি করতে অনেক সময় দিতে হয় এবং কাজ করতে হয়। স্ট্রেটেজি তৈরি করে সেটা বিজনেসে প্রয়োগ করতে হয়। তবে এটাও সব সময় ঠিক নয় যে সব স্ট্রেটেজি সঠিক ভাবে কাজ করবে এবং সব কিছু পরিকল্পনা মতই হবে। একটা ক্যাম্পেইন রান করার পর অডিয়েন্সের কাছে সেটা আকর্ষণীয় নাও লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা হল আপনি চাইলেই পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্ট্রেটেজি পরিবর্তন করতে পারবেন।
তাছাড়া ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর স্ট্রেটেজি পরিবর্তন করা বেশ সহজ। ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এ আপনি হুট করে একটা বিলবোর্ডের ডিজাইন চেঞ্জ করতে না পারলেও আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এর এড ডিজাইন চেঞ্জ করতে পারবেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং, মার্কেটিং প্রচেষ্টা গুলো পরিমাপ করা সহজ করে দিয়েছে। সহজেই কনভারসন রেট বাড়ানোর জন্য কার্যকর স্ট্রেটেজি অবলম্বন করা যায়। প্রতিনিয়ত পারফরম্যান্স ট্র্যাক করে ক্যাম্পেইন পরিবর্তন করে এটিকে অধিক ফলপ্রসূ করে তোলা যায়। যার মাধ্যমে কনভারসন রেট বাড়ে এবং লিড জেনারেট হয়।
আমরা জানি সকল লিড সকল বিজনেসের জন্য কাজের না। দারুণ ব্যাপার হল ডিজিটাল মার্কেটিং আপনাকে হাই কোয়ালিটি লিড পেতে সাহায্য করবে যারা স্পেসিফিক ভাবে আপনার সার্ভিস বা প্রোডাক্ট নিয়ে আগ্রহী। আর এভাবেই সঠিক অডিয়েন্সের সাথে কানেক্ট হয়ে কনভারসন রেট বাড়বে এবং বিজনেসের গ্রোথ আসবে।
প্রতিটি বিজনেসের জন্যই টা গুরুত্বপূর্ণ, শুরু থেকে কাস্টমারদের এনগেজড করা। প্রথম থেকেই কাস্টমারদের কানেক্ট করতে পারলে সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়। আর ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাস্টমারকে কানেক্ট রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে আপনি কাস্টমারের পুরো ক্রয় জার্নি ট্র্যাক করতে পারবেন। আপনি জানতে পারবেন ঠিক কোন পদক্ষেপ গুলো নেয়ার পর বেশি লিড জেনারেট হচ্ছে, সেলস বাড়ছে। উপযুক্ত স্ট্রেটেজি নিয়ে আপনি চাইলে প্রতিটা স্টেজে অডিয়েন্সকে এনগেজড করতে পারেন।
ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এখনো পুরোপুরি বাদ দেয়ার সময় আসে নি। তবে প্রোডাক্ট সার্ভিস বেধে ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব নতুন করে বলার কিছু নেই। এমন অনেক প্রোডাক্ট আছে যেগুলো কেবল অনলাইন মার্কেটিং এর জন্যই উপযুক্ত।
আপনার বিজনেসের জন্য অবশ্যই অনলাইন এবং ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং উভয়ই গ্রহণ করতে পারেন তবে খেয়াল রাখতে হবে ভুল জায়গায় যেন অতিরিক্ত অর্থ অপচয় না হয়।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 603 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।
Amake keu import export er bengla book dite paran