ভিপিএন ব্যবহার করে নিষিদ্ধ সব ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে কি পুলিশে ধরবে? এবং ভিপিএন ব্যবহার করলে ইন্টারনেট স্পিড কি সত্যিই বাড়ে?

টিউন বিভাগ সাইবার সিকিউরিটি
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 12
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই? আশা করছি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে অনেক বেশি ভালো আছেন। ভিপিএন সম্পর্কে বর্তমানে সকলেই কম বেশি জানেন অথবা সকলেই ভিপিএন কোন না কোন সময় ব্যবহার করেছেন। এমনকি বর্তমানেও আপনি হয়তোবা ভিপিএন ব্যবহার করে থাকেন।

ভিপিএন কে আমরা পরিচয় গোপন রাখার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করি। যেখানে আমরা এটা অনুমান করি যে, ভিপিএন ব্যবহার করার ফলে আমাদের পরিচয় গোপন থাকে এবং কেউ আমাদেরকে আর ট্র্যাকিং করতে পারে না। এছাড়াও বর্তমানে আমরা অনেক বিজ্ঞাপণ দেখে থাকি যেখানে বলা হয় ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে ইন্টারনেট স্পিড অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু আসলেই কি ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে ইন্টারনেট স্পিড বেড়ে যায়? এছাড়া ভিপিএন ব্যবহার করে কোন অবৈধ বা নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা আপনাকে ধরতে পারবে কিনা, এটি নিয়ে আলোচনা করব আজকের এই টিউন টি তে।

ভিপিএন সম্পর্কে আপনাদের সম্পূর্ণ ধারণা দেবার জন্য আপনাকে অবশ্যই এই টিউনটি মনোযোগ দিয়ে দেখতে হবে। আর তাহলেই আপনার ভিপিএন সম্পর্কে যত সব ভুল ধারণা ভেঙ্গে যাবে এবং এই টিউনে আপনি ভিপিএন সম্পর্কে নতুন কিছু শিখতে পারবেন। এজন্য সম্পূর্ণ টিউনটি অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে দেখুন এবং সেইসঙ্গে আমাকে এখনো ফলো করেন না রেখে থাকলে অবশ্যই ফলো করে রাখুন। ভিপিএন সম্পর্কে জানতে হলে আমাদেরকে বুঝতে হবে ভিপিএন আমরা আসলে কেন ব্যবহার করি অথবা অন্য সব মানুষ কেন ভিপিএন ব্যবহার করে? এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই চলুন তবে আজকের টিউনটি সম্পূর্ণ শুরু করা যাক।

ভিপিএন আমরা আসলে কেন ব্যবহার করি?

বাস্তব জীবনে মানুষ গোপনীয়তার সঙ্গে যখন কোন কিছু অনুসন্ধান করতে থাকে, তখন সে তারপরিচয় অবশ্যই গোপন করতে চায়। আর এটি যখন হয় ইন্টারনেট দুনিয়ায় বা অনলাইন দুনিয়ায়, তখন এটিই হয় ভিপিএন। ভিপিএন কি, এটি সম্পর্কে আশা করছি আপনারা সকলেই জানি। এক্ষেত্রে ভিপিএন সম্পর্কে ছোট করে বললে বলা যায়, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। ভিপিএন কি এটি নিয়ে আমাকে আর বিস্তারিত বলতে হবে না, কেননা আপনারা ইতিমধ্যেই অনেক জায়গায় এই ভিপিএন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা শুনে এসেছেন।

আমাদের দেশের সরকার যখন কোন একটি ওয়েবসাইটে আমাদেরকে প্রবেশ করতে দেয় না বা কোন একটি ওয়েবসাইটকে কোন একটি দেশের জনগণের জন্য নিষিদ্ধ করে রাখা হয়, তখন সেই ওয়েবসাইটে পরিচয় গোপন করে আমাদের প্রবেশ করার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটগুলো ব্রাউজ করার জন্য আপনি ভিপিএন কে ব্যবহার করেন। যখন আপনি আপনার পরিচয় ইন্টারনেট দুনিয়ায় গোপন রাখতে চান বা গোপন রেখে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান, তখনই দরকার হয় এই ভিপিএন এর।

অনেকেই বলে থাকে যে, ভিপিএন ব্যবহার করলেন নাকি ইন্টারনেট স্পিড অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু VPN ব্যবহার করলে কি সত্যিই ইন্টারনেট স্পিড বেড়ে যায়? আজকের এই টিউনটি তে আমি এসব বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করব। তাই সম্পূর্ণ টিউনটি অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে দেখবেন। টিউনটি সম্পূর্ণ দেখে ভাল লাগলে জোসস করবেন এবং ভালো না লাগে টিউনমেন্ট করে সেটাও জানাবেন। চলো এবার সবকিছু বাদ দিয়ে মূল টিউনে ঝাঁপিয়ে পড়ি।

ভিপিএন হিসেবে আমরা কোনটিকে চিনি?

প্রথমে আপনাদেরকে একটি বিষয় পরিষ্কার করে দেয়া দরকার যে, আপনি আমরা যে জিনিসটিকে VPN ভেবে ব্যবহার করি, সব সময় এটি ভিপিএন হয়না। আমরা স্পিড বাড়ানোর জন্য VPN ব্যবহার করি, কিন্তু আমরা খেয়াল করি না আমাদের মোবাইলের সেটিং এ ভিপিএন অপশন রয়েছে। আমরা প্লে স্টোর থেকে যখন একটি ফ্রি ভিপিএন অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করি, তখন আমরা জানতেই পারি না যে, এটি একটি ভিপিএন নয়। এই ব্যাপারটি কিরকম ভাবে হয়? ব্যাপারটা এরকম যে, আপনার মোবাইলের সেটিং এ যে ভিপিএন অপশন রয়েছে, সেখানে আপনি মেনুয়ালি ভিপিএন সেট করতে পারবেন।

ব্যাপারটা এরকম যে, আপনি যদি মোবাইল দিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলতে চান, তবে এজন্য অবশ্যই মোবাইলে একটি সিম কিনে এনে প্রবেশ করাতে হবে। অর্থাৎ‌ এক্ষেত্রে ধরুন, আপনি কারো সঙ্গে কথা বলার জন্য এয়ারটেলের একটি সিম কিনে এনে মোবাইলে প্রবেশ করলেন এবং তারপর তার মাধ্যমে কথা বলতে পারবেন। ঠিক সেরকম ভাবে, আপনি সিম এর মত একটি ভিপিএন প্রোফাইল তৈরি করলেন; তারপর সেই প্রোফাইল এর মাধ্যমে আপনি ভিপিএন এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। প্লে স্টোরে যে সব Free vpn application পাওয়া যায়; সেগুলো আমরা যে মেনুয়ালি ভিপিএন প্রোফাইলগুলো সেটিং থেকে তৈরি করি, সেটিই অ্যাপ্লিকেশনগুলো অটোমেটিক তৈরি করে দেয়। অর্থাৎ, প্লে স্টোরে যে সব অ্যাপ্লিকেশনগুলো রয়েছে সেগুলোর নিজেই ভিপিএন নয়; সেগুলো আপনার ডিভাইসের VPN প্রোফাইল তৈরি করতে কাজে লাগে।

তবে এখানে আরেকটি ব্যাপার হতে পারে। আর তা হচ্ছে, আমরা Play store থেকে যে VPN অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করব, তাদের নিজস্ব ভিপিএন সার্ভার থাকতে পারে। অর্থাৎ তারা অন্য ভিপিএন সার্ভার এর সাথে কানেক্ট না করে দিয়ে নিজেদের সার্ভারের সঙ্গে ডিভাইসকে কানেক্ট করে দিতে পারে। আর এক্ষেত্রে সেই সফটওয়্যারটি নিজেই একটি ভিপিএন।

ভিপিএন আমরা আসলে কেন ব্যবহার করছি?

এবার ভিপিএন এর কাহিনী তো চলে গেল। এবার আপনি VPN এর মাধ্যমে আপনার মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন অথবা আপনি VPN ব্যবহার করার মাধ্যমে এমন কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে চাচ্ছেন, যেসব ওয়েবসাইটে আপনার দেশ থেকে প্রবেশ নিষিদ্ধ। ব্যাপারটা এরকম যে, আপনি একটি সাধারন ওয়েবসাইট দেখতে চান। এজন্য আপনি ব্রাউজারে গিয়ে Google.com লিখে সার্চ করলেন। এবার আপনার এই সার্চটি সরাসরি গুগলের সার্ভার এ চলে যাবে।

এক্ষেত্রে আপনার সার্চটি একটি প্যাকেট এর আকারে সেই ডাটা টি প্রথমে এয়ারটেলের সার্ভারে চলে যাবে। উদাহরণস্বরূপ যেহেতু আপনি মোবাইলের ইন্টারনেট সংযোগ হিসেবে এয়ারটেলের ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তাই আপনার আইএসপি বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এর কাছে প্রথমে Quiry গেল। এরপর সেখান থেকে দেখা হবে আপনি ঠিকঠাক জিনিস দেখতে চাইছেন কিনা; আপনি যে বিষয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছেন বা যেই ওয়েবসাইট সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছেন সেটি নিষিদ্ধ কিনা। যদি সেখানে দেখে ঠিক রয়েছে, তবে এই এয়ারটেলের সার্ভার সেই ডাটা টি আমেরিকার সেই গুগলের সার্ভারে পৌঁছে দেবে। এবার গুগল সেখান থেকে দেখবে, আপনি কি চাইছেন এবং সে অনুযায়ী আপনাকে আবার রিপ্লাই দেবে।

এবার সেটিও একটি প্যাকেট এর আকারে এয়ারটেলের সার্ভারে আসবে এবং এয়ারটেল এর সার্ভার আবার আপনার মোবাইল অথবা কম্পিউটার এ সেই অনুযায়ী তথ্য পাঠাবে। এভাবে মূলত ব্যাপারটি কাজ করছে। কিন্তু আমি এখানে যতটা সহজ ভাবে আপনাদেরকে বললাম, বিষয়টি কিন্তু ততটা সহজ নয়। বরং, ইন্টারনেটের কাজ করার প্রক্রিয়া আরো অনেক দীর্ঘ। যেখানে আপনার ডাটাগুলোকে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর এবং সেগুলো কে অপটিক্যাল ফাইবার এর মধ্যে দিয়ে প্রেরণ করা এবং সেগুলো ফায়ারওয়াল অতিক্রম করে কোন সার্ভারে প্রবেশ করা এবং আপনার ডিভাইসের ফায়ারওয়াল অতিক্রম করে আপনার ডিভাইসে আসা ইত্যাদি অনেক বিষয় গুলো কাজ করে।

যাইহোক এসব বিষয়গুলো বললে আরো একটি টিউন করা দরকার। আবার অন্য কোন টিউনে না হয় এসব বিষয়ে আলোচনা করা যাবে। কিন্তু আপনি যখন ভিপিএন ব্যবহার করছেন তখন আপনি এয়ারটেলের সার্ভারকে বোকা বানাচ্ছেন। তবে এই ব্যাপারটি কিভাবে হচ্ছে?

ভিপিএন যেভাবে বোকা বানিয়ে অন্য দেশের সার্ভারে প্রবেশ করছে

আমরা আমাদের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কে বোকা বানাতে চাচ্ছি বিধায় ভিপিএন ব্যবহার করি। আমাদের যদি কোন একটি অবৈধ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার দরকার পড়ে, যে ওয়েবসাইট আমাদের দেশ থেকে নিষিদ্ধ অথবা সেই দেশ থেকে আমাদের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ; তবে আমরা এক্ষেত্রে পরিচয় গোপন করার জন্যই ভিপিএন এর সাহায্য নেই। এক্ষেত্রে ভিপিএন আমাদের পরিচয় গোপন রাখে এবং সেই সব ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়। আপনি যখন সাধারণভাবে কোনো কিছু অনুসন্ধান করেন মোবাইলের ভিপিএন চালু না করে, তখন সেটি সাধারণভাবেই এয়ারটেলের সার্ভার থেকে পরীক্ষা করে আপনাকে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আপনি যখন ভিপিএন কে ব্যবহার করবেন তখন সেটি আর সাধারণ ডাটা প্যাক হিসেবে এয়ারটেলের সার্ভারে যাবে না।

আপনি যখন ভিপিএন কে ব্যবহার করে কোন কিছু অনুসন্ধান করবেন বা কোন বিষয়ে পাবার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠাবেন, তখন সেটি এনক্রিপটেড হয়ে যাবে। তখন আপনি আপনার সেই ডেটা প্যাকেটের ভেতর কি দিয়েছেন সেটি এয়ারটেলের সার্ভার আর, ঠিকঠাক পড়তে পারবে না বা বুঝতে পারবে না। তখন সেই ডাটাপ্যাক দেখাবে যে, সেই ভিপিএন এর সার্ভার এর কাছে আপনি একটি রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন। এক্ষেত্রে ধরুন, আপনি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কোন একটি ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। এবার এয়ারটেলের সার্ভার বুঝবে যে, আপনি সেই রাশিয়ার ভিপিএন সার্ভার এর কাছে কিছু তথ্য চেয়েছেন।

এক্ষেত্রে সে এটি দেখবেনা যে, আপনি আমেরিকার সেই ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে চাচ্ছেন। আপনার বর্তমান আইপি অ্যাড্রেস দিয়ে আমেরিকার সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ নিষিদ্ধ বিধায় আপনি ভিপিএন এর মাধ্যমে আইপি অ্যাড্রেস পাল্টিয়ে নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে যদি আপনার দেশ থেকে সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ নিষিদ্ধ না হয়ে সেই দেশ থেকে বরং আপনার দেশের আইপি অ্যাড্রেসে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে থাকে, তবে আপনি ভিপিএন এর আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করার কারণে তারাও বুঝতে পারবে না যে আপনি এই দেশের নাগরিক বা এই দেশ থেকে ব্যবহার করছেন। যেখান থেকে তারা শুধুমাত্র রাশিয়ার সেই সার্ভারের কাছে আপনার রিকোয়েস্টের তথ্য দিবে এবং রাশিয়ার সেই ভিপিএন সার্ভার আপনার কাছে তথ্য সরবরাহ করবে। এখানে ভিপিএন একটি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করলো।

যেহেতু এক্ষেত্রে রাশিয়ার সেই সার্ভারে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ নয়, এজন্য এয়ারটেল নেট সার্ভার সেই ডেটাকে সেখানে যেতে অনুমতি দিবে এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যকে আবার আপনার ডিভাইসে আসার অনুমতি দিবে।

এতে এয়ারটেলের সার্ভার কিন্তু বুঝতেই পারবে না যে, আপনি মূলত রাশিয়ার সেই সার্ভার এর মাধ্যমে আমেরিকার কোনো নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটের অ্যাক্সেস চাচ্ছেন। এভাবে করে আপনি যখন কোন কিছুর রিকোয়েস্ট পাঠাবেন, তখন এয়ারটেলের সার্ভার সেই রিকোয়েস্ট টিকে রাশিয়ার সেই ভিপিএন সার্ভারের কাছে পাঠাবে এবং রাশিয়ার সার্ভার সেই এনক্রিপটেড ডেটাকে ডিক্রিপ্ট করে সেটিকে আবার পড়ার মাধ্যমে সেটি অনুযায়ী তথ্য খুঁজে বের করবে। এবার সেই ভিপিএন সার্ভার টি দেখবে আপনি আসলে কি দেখতে চেয়েছিলে। আপনি যে জিনিসটি এয়ারটেলের সার্ভার থেকে গোপন করতে চেয়েছিলেন, সেটি সে এনক্রিপটেড থেকে ডিক্রিপ্ট করার মাধ্যমে ইন্টারনেটে আবার অনুসন্ধান করবে। এবার আপনি হয়তোবা দেখতে চেয়েছেন চীনের কোন একটি ওয়েবসাইট; তখন রাশিয়ার সেই সার্ভার থেকে চীনের সেই ওয়েবসাইটে রিকোয়েস্ট পাঠাবে এবং সেই ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য আবার এনক্রিপটেড করার মাধ্যমে এয়ারটেলের সার্ভারে পাঠাবে।

এবার সেখান থেকে এয়ারটেল এর সার্ভার আবার পুনরায় সেই এনক্রিপ্টেড ডাটাকে আপনার ডিভাইসে পাঠাবে; যেটিকে আপনার ডিভাইস ডিক্রিপ্ট করার মাধ্যমে আবার আপনাকে দেখাবে। এখানে আপনি চীনের যে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন, সেই ওয়েবসাইট আপনার দেশ থেকে নিষিদ্ধ হলেও রাশিয়া থেকে সেটি নিষিদ্ধ নয়। এক্ষেত্রে আপনি যে অনুরোধটি এয়ারটেল এর কাছে পাঠিয়েছিলেন, সেখানে এয়ারটেল বুঝেছিল এটি যাবে রাশিয়ার সার্ভারে। যেহেতু রাশিয়ার সেই সার্ভার টি আপনার দেশের নিষিদ্ধ নয়, এজন্য এটিকে সে যেতে দিয়েছে। এবার আপনার চাহিদা অনুযায়ী রাশিয়ার সার্ভারটি সেই তথ্যটি খুঁজে বের করে আবার সেদিকে এনক্রিপ্টেড করে এয়ারটেলের সার্ভারে পাঠিয়ে দেয় এবং সেখান থেকে আপনার ডিভাইসে সেটি চলে আসে।

এখানে এয়ারটেলের সার্ভার যেহেতু দেখছে যে, এটি তো রাশিয়ার সার্ভার থেকে আসলো; এক্ষেত্রে সব ঠিকঠাক রয়েছে। ঠিক এতটা সহজ ভাবেই আপনার এয়ারটেল সার্ভার কে বোকা বানানো সম্ভব। আর এভাবে করেই আপনি বিভিন্ন দেশের নিষিদ্ধ সব ওয়েবসাইটে এক্সেস করতে পারছেন ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে। আর এর মাঝখানে কাজ করবে রাশিয়ার সেই ভিপিএন সার্ভার; যে এয়ারটেলের সার্ভারকে বোকা বানাচ্ছে। আর এভাবে করে বোকা বানানোর মাধ্যমেই যতসব নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করা হয়।

ভিপিএন ব্যবহার করলে কি আমাদেরকে আর ধরতে পারা যাবে না, বা আমাদের পরিচয় সনাক্ত করা যাবেনা?

এত কিছু আলোচনা করার পর আমাদের মধনে হতে পারে যে, ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে আমাদের পরিচয় হয়তোবা গোপন থাকলো। আর এতে করে ভিপিএন ব্যবহার করার জন্য আমাকে আর কেউ খুঁজে পাবে না অথবা সরকার আমাকে আর ধরতে পারবেনা। ‌কিন্তু এক্ষেত্রে Digital footprint বলে একটি কথা আছে। ‌ আপনি ইন্টারনেটে যেটিই করুন না কেন, আপনার কাজকর্ম কিন্তু রেকর্ড হয়ে থাকছে। ‌সেই Digital footprint এর মধ্যে আমরা এমন কিছু ভুল করি এবং এমন কিছু তথ্য ছেড়ে দিয়ে আসি যেগুলোর মাধ্যমে পরবর্তীতে আমাদের খুব সহজেই ধরে ফেলা সম্ভব।

এছাড়া যে ভিপিএন সার্ভার টি আপনাদের সব কাজ করে দিল আপনার সব পরিচয় গোপন রেখে, সেই ভিপিএন ও কিন্তু আপনার সব তথ্য রেকর্ড করে রেখেছে। এক্ষেত্রে কোন সময় যদি আপনার তথ্য খোঁজার প্রয়োজন পড়ে, তবে এজন্য সেই ভিপিএন সার্ভিস প্রোভাইডার এর কাছ থেকেও কিন্তু সরকার তথ্য নিতে পারে। এছাড়া আপনার আইপি অ্যাড্রেস দিয়েও খুঁজে বের করা সম্ভব আপনি আসলে কে, আপনার লোকেশন কোথায় এবং আপনি কোন কোন বিষয়ে অনুসন্ধান করেছেন ইত্যাদি বিষয়গুলো মিলিয়ে আপনাকে সহজেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে আপনাকে খুঁজে বের করা একেবারে অসম্ভব নয়। আপনি যতই ভিপিএন ব্যবহার করুন না কেন, এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে খুঁজে বের করা সম্ভব।

আবার অনেকে মনে করতে পারে যে, আমরা যদি ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করার পরিবর্তে Paid VPN ব্যবহার করি তাহলে তো আর আমাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে আপনার এ ধারণাটি পোষণ করা ও ভুল। পেইড ভিপিএন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনি তাদের Terms and condition পড়লে আপনি দেখতে পারবেন, তারা বলবে আমরা কিন্তু আমাদের দেশের সরকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। এক্ষেত্রে আপনি যদি রাশিয়ার কোন ভিপিএন সার্ভার ব্যবহার করেন, তবে তারা কিন্তু সেই দেশের সরকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদেরকে তারা যে কোন তথ্য দিতে বাধ্য। এক্ষেত্রে রাশিয়ার সরকার যদি তার কাছে কোনো তথ্য চায়, তবে সরকারকে সব তথ্য দিয়ে দিবে।

একইভাবে আপনি যদি কোন অপরাধ করে থাকেন, তবে এ দেশ থেকে আপনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার তথ্য সেই দেশ থেকে আপনার তথ্য আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে আপনি কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে গেলে আপনার বিরুদ্ধে যদি তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হয় তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভিপিএন সার্ভিস প্রোভাইডার এর কাছ থেকেও তথ্য নিয়ে আসতে সক্ষম। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বৈধ হলেও অনেক দেশে ভিপিএন ব্যবহার করা অবৈধ হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ, অনেক দেশে ভিপিএন ব্যবহার করা বেআইনি।

বর্তমানে এরকম অনেক দেশে ভিপিএন ব্যবহার করা বেআইনি একটি কাজ। যেখানে বলতে গেলে, সৌদি আরব এবং চীনের মতো দেশগুলোতে ভিপিএন ব্যবহার করা অবৈধ বা বেআইনি। এসব দেশে ভিপিএন ব্যবহার করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তবুও এসব দেশে যারা গোপনে ভিপিএন ব্যবহার করে তাদেরকে সরকার জেল-জরিমানা করে না। কিন্তু যারা এসব দেশ থেকেও ভিপিএন ব্যবহার করে তাদেরকে সরকার যে কোন একদিন চাইলে জরিমানা করতে পারে অথবা জেলে দিতে পারে।

কোন একজন ভিপিএন ব্যবহার করতে চাইলে সরকার অনায়াসেই খুঁজে বের করতে পারে এবং তাদের ধরে ফেলতে পারে। সরকার যদি চায় কোন একজন ব্যক্তিকে ট্রেস করতে, তবে এটি কোন ব্যাপারই না। কিন্তু সরকার এসব ছোটখাটো ব্যাপারে কোন সময় নষ্ট করে না। যদি বড় কোন ইস্যু হয় তখনই এসব বিষয়ে খোঁজখবর নেয়। যেমন ধরুন, হ্যাকিং এর মত ঘটনা।

হ্যাকারেরা তবে পরিচয় গোপন রেখে কিভাবে হ্যাকিং করে?

এসব আলোচনা থেকে এবার আপনার মনে হতে পারে যে, হ্যাকাররা টবে কিভাবে পরিচয় গোপন রাখে? হ্যাকাররা হ্যাকিং করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভিপিএন ব্যবহার করে। ‌তবে তারা হ্যাকিং করার সময় একটি ভিপিএন ব্যবহার করেনা বা একটি সার্ভার ব্যবহার করে না। তারা বিভিন্ন দেশের সার্ভারে নিজেদেরকে বাউন্স করায়; অর্থাৎ প্রথমে সে রাশিয়ার একটি সার্ভারে গেল, তারপর রাশিয়ার সেই সার্ভার অন্য কোন দেশের সার্ভারে পাঠালো, সেই দেশের সার্ভার আবার অন্য আরো একটি দেশের সার্ভারে তার ডেটা টিকে পাঠালো। এভাবে করে তারা ১০-১৫ টি সার্ভারে তার ডেটাটিকে ঘুরানোর পর আসল সার্ভারে প্রবেশ করে।

এর ফলে পরবর্তীতে তাদেরকে যদি খুঁজে বের করতে হয়, তবে এতগুলো সার্ভারে খুঁজে পাবার জন্য একটি গোলক ধাঁধায় পড়তে হয়। আর এক্ষেত্রে সেই হ্যাকার কে খুঁজে পাওয়া অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও ওপেন ভিপিএন বলে একটা জিনিস রয়েছে। যার মাধ্যমে এমন কিছু সার্ভার তৈরি করা হয়, যে সার্ভারগুলো অনেকগুলো সার্ভারের মাধ্যমে বাউন্স করে ভিপিএন তৈরি করে। যদি আপনি ওপেন ভিপিএন খুঁজে বের করতে পারেন, তাহলে আপনি আপনার পরিচয় হয়তোবা গোপন রাখতে পারবেন।

তাই ভিপিএন দিয়ে আপনার পরিচয় গোপন রাখার বিষয়টি অতটা সহজ নয়। তবে ভিপিএন দিয়ে আপনি চাইলে যেকোন ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করতে পারেন। তবে আপনি কোন কোন ওয়েবসাইটে অ্যাক্সেস করছেন সেগুলো সমস্ত তথ্যই জমা হচ্ছে, এ বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন। আপনি যত বেশি চালাক ই হোন না কেন, অবশ্যই আপনাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধরতে সক্ষম। তবে এক্ষেত্রে হয়তোবা তাদের কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে।

এতসব আলোচনা তো গেল ভিপিএন নিয়ে আমাদের ধারণা এবং ভিপিএন আমাদেরকে কিভাবে সার্ভিস দিচ্ছে সে বিষয়ে সম্পর্কে। ‌ কিন্তু আমাদের অনেকেরই ধারণা রয়েছে যে, ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে ইন্টারনেট স্পিড বেড়ে যায়। তবে আসলেই কি ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে ইন্টারনেট স্পিড বেড়ে যায়?

ভিপিএন ব্যবহার করলে কি ইন্টারনেট স্পিড বাড়ে?

বর্তমানে আমরা অনেক জায়গায় বিজ্ঞাপণ হিসেবে দেখতে পাই যে, ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে ইন্টারনেট স্পিড বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া আমরা ইতিমধ্যেই অনেক জায়গায় হয়তো বা শুনে থেকেছি, ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে ইন্টারনেট স্পিড বাড়ে। কিন্তু ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে ইন্টারনেট স্পিড বাড়ার এই কথাটি আসলে কতটুকু সত্য এটি আমাদের অবশ্যই জানা জরুরী। এবারের এই পর্যায়ে আমি ভিপিএন ব্যবহার করে ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।

এক্ষেত্রে ধরুন, আপনি যদি সরাসরি আমেরিকার সার্ভারের কোন একটি তথ্যকে অ্যাক্সেস করতে চান, তবে এক্ষেত্রে সময় বেশি লাগবে নাকি আপনি সেই তথ্যটি পাবার জন্য রাশিয়ার পর হাঙ্গেরি হয়ে আবার আমেরিকা থেকে সেই তথ্যটি সেই মাধ্যমে নিতে বেশি সময় লাগবে? এক্ষেত্রে অবশ্যই এত্তগুলো জায়গা ঘুরে যদি আমেরিকা থেকে এই তথ্যটি নিতে চান, তবে এক্ষেত্রেই সবচাইতে বেশি সময় লাগবে। অবশ্যই সরাসরি গন্তব্য গেলে সময় কম লাগবে এবং ঘুরে ঘুরে গন্তব্যে গেলে সময় বেশি লাগবে। এছাড়া আরো একটি বিষয় মাথায় রাখবেন যে, আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার সে যদি আপনাকে 5mbps ইন্টারনেট স্পিড দিয়ে থাকে; তবে আপনার সেই ভিপিএন যতই স্পিড দেক না কেন, তাদের সার্ভারে এসে স্পিড ঠিকই কমে যাবে। এক্ষেত্রে আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার হতে পারে কোন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অথবা মোবাইল নেটওয়ার্ক।

এক্ষেত্রে আপনি যখন মোবাইল অপারেটর হিসেবে এয়ারটেল এর সার্ভারের কাছে আপনার ডেটাটি পাঠাবেন, তখন সেই ভিপিএন এর কাছে হয়তোবা অনেক স্পিডে ডাটা পাঠাবে এবং ভিপিএন সার্ভার থেকে এয়ারটেল সার্ভারে ও খুব দ্রুত ডাটা পাঠাবে‌। কিন্তু আপনার সঙ্গে এয়ারটেলের যে কাজকর্ম হবার দরকার, এটি কিন্তু 5mbps এই হবে। ‌এক্ষেত্রে স্পিড কিন্তু কখনোই বাড়বে না। আপনাকে সেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার থেকে যে স্পীড দেওয়া হয়েছিল অথবা মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে যে স্পিড দেওয়া হয়েছে, আপনি শুধু সেই গতিই পাবেন। এর বাইরে গতি কম ছাড়া বেশি পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

সুতরাং এটিও একটি ভুল ধারণা যে, ভিপিএন ব্যবহার করলে ইন্টারনেটের স্পিড বেড়ে যায়। আজকের এই টিউন এর মাধ্যমে আপনি আপনাদেরকে এটুকু তথ্যই শেয়ার করতে চাই। আমি এর বেশি আর গভীরে কিছু বলতে চাই না। আশা করছি আজকের এই টিউনটি মাধ্যমে আপনার অনেক উপকার হয়েছে।

শেষ কথা

ভিপিএন নিয়ে আমরা অনেকে অনেক জানলেও এটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা হয়তো অনেকেরই অজানা। তাই আজকের এই টিউন এর মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে ভিপিএন সম্পর্কে কিছুটা ধারনা দেবার চেষ্টা করলাম। আশা করছি আজকের এই টিউন এর মাধ্যমে ভিপিএন সম্পর্কে আপনার ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছে। ‌সেইসঙ্গে আজ থেকে আপনি জীবনকে নতুন ভাবে চিনলেন।

ভিপিএন সম্পর্কে আপনার যদি আরো কিছু জানার থেকে থাকে, তবে অবশ্যই নিচের টিউনমেন্ট বক্সে টিউনমেন্ট করে জানাবেন। আমি চেষ্টা করব আপনার জন্য সেই বিষয়ে নতুন কোন টিউনে আলোচনা করতে। টিউনটি তবে আপনার কাছে ভাল লেগে থাকলে জোসস করবেন এবং সেইসঙ্গে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আজ তবে আমি এখানেই শেষ করছি। আসসালামু আলাইকুম।

Level 12

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 332 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 60 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস