আপনার কম্পিউটার কি স্থায়ীভাবে স্লো হয়ে গেছে? তাহলে এবার স্থায়ী ভাবে কম্পিউটারকে ফাস্ট করে নিন! এবারের দৌড়ে জয় আপনারই!

Level 7
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা
————————–— بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ————————–—

সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আমার আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি স্লো কম্পিউটারকে সুপার ফাস্ট করার জন্য এক্সক্লুসিভ সব উপায় সম্বলিত আমার আজকের টিউন।

দীর্ঘদিন থেকে একটি কম্পিউটার ব্যবহার করলে সেটা হার্ডওয়্যারের সমস্যার কারনে হোক কিংবা বয়সের ভারে হোক এক সময় স্লো হয়ে যায়। যদিও কম্পিউটার স্লো হওয়াটা সব সময় একই রকম হয় না। মাঝে মাঝে ম্যালওয়্যার, জাঙ্ক ফাইল বা আরও বিশেষ কিছু কারনে কম্পিউটার স্লো হয়ে যেতে পারে যেটাকে আমরা সফটওয়্যার দিয়ে সহজেই সারিয়ে তুলতে পারি। আবার কিছু কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের সমস্যার কারনেও স্লো হয়ে যেতে পারে।

সফটওয়্যার কেন্দ্রিক কম্পিউটার স্লো হলে খুব বেশি স্লো হয় না। কিন্তু হার্ডওয়্যারের কারনে কম্পিউটার স্লো হয়ে গেলে সেটা অনেক বেশি স্লো হয়ে যায়। আমি আমার আগের টিউনে স্লো কম্পিউটারে কিছু প্যারামিটার দেখিয়েছিলাম। সেগুলো যে পিসির সাথে মিলে যাবে আমরা সে পিসিকে স্লো পিসি বলবো। যাহোক, মনে হয় আপনারা আমার আগের টিউনটি পড়েছেন। না পড়লে লক্ষণগুলো আগে দেখে নেওয়ার অনুরোধ করছি।

কম্পিউটার যে কারনেই স্লো হোক সেটার সমাধান আপনারা অবশ্যই আমার টিউনগুলো থেকে ধারাবাহিকভাবে পাবেন। আজকের টিউনে আমরা দেখবো কীভাবে হার্ডওয়্যারের কারনে কম্পিউটার স্লো হয় এবং সেটাকে কীভাবে ফাস্ট করা যায়। মুলত হার্ডওয়্যারের কারনে কম্পিউটার স্লো হলে সেই হার্ডওয়্যারগুলোকে আপগ্রেড করতে হয়। চলুন দেখে আসি কোন হার্ডওয়্যারগুলো কম্পিউটার স্লো হওয়ার জন্য দায়ী এবং কোনগুলো আপগ্রেড করতে হবে।

কম্পিউটারের ফিজিক্যাল মেমোরি – র‍্যাম (RAM)

কম্পিউটারের র‍্যাম (RAM – Random Access Memory) হলো চলমান কম্পিউটার মেমোরির হাই পারফোরমেন্স ফর্ম। কম্পিউটারে যখন কোন প্রোগ্রাম রান হয় তখন সেটা অস্থায়ীভাবে র‍্যামে জমা হয়। আপনি যতো বেশি প্রোগ্রাম চালাবেন কম্পিউটার র‍্যামে ততো বেশি ফাইল জমা হবে এবং খালি জায়গার পরিমান কমে আসবে। এখন যদি অনেকগুলো প্রোগ্রাম একসাথে কম্পিউটারে রান করা হয় এবং সবগুলো প্রোগ্রামের টেম্পোরারি ফাইল জমা হওয়ার জন্য র‍্যামে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে তাহলে ফাইলগুলো হার্ড ড্রাইভে জমা হতে থাকে।

সমস্যা হলো কম্পিউটার র‍্যাম এর তুলনায় হার্ড ড্রাইভ মেমোরি (ডিস্ক ক্যাশ) বহুগুন স্লো। ফলে এরকম পরিস্থিতিতে আপনার কম্পিউটার অনেক বেশি স্লো হয়ে যাবে। আসল কথা হলো, কম্পিউটারে যতো বেশি র‍্যাম থাকবে কম্পিউটার ততো বেশি ফাস্ট থাকবে।

বুঝতেই পারছেন কম্পিউটারকে দ্রুতগতির করার জন্য সবার আগে প্রয়োজন র‍্যাম আপগ্রেড করা। আপনি চাহিদা অনুযায়ী যেকোন ধারন ক্ষমতার র‍্যাম কম্পিউটারে লাগাতে পারেন। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে আপনাকে পরামর্শ দিবো ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ডিফল্টভাবে যতোটুকু র‍্যাম থাকে তার সর্বোচ্চ দ্বিগুন আপগ্রেড করার জন্য। ল্যাপটপে বেশি র‍্যাম লাগালে সিপিইউ ব্যবহার প্রায় ১০০% হয়ে যেতে পারে।

তবে ডেস্কটপের ব্যাপারটা আলাদা। অন্যন্য হার্ডওয়্যার কনফিগারেশনের সাথে মিল রেখে আপনি ডেস্কটপে র‍্যাম আপগ্রেড করতে পারবেন। তবে র‍্যামের ব্যাপারে একটা জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখবেন বাস স্পিড যেন একাধিক র‍্যামের ক্ষেত্রে সমান থাকে।

গ্রাফিক্স কার্ড – ডেস্কটপের জন্য

অধিকাংশ বেসিক গ্রাফিক্স কার্ড গ্রাফিক্স রেন্ডারিং এর জন্য র‍্যাম এর কিছু অংশ এবং গ্রাফিক্স প্রসেসিং এর জন্য সিডিইউ এর কিছু অংশ দখল করে নেয়। সুতরাং গ্রাফিক্স কার্ড আপগ্রেড করা হলে র‍্যাম এবং প্রসেসর খুব ভালো পারফরমেন্স দেবে এটাই স্বাভাবিক। যদিও ভালো গ্রাফিক্স কার্ড র‍্যামকে খুব বেশি ফ্রি করে দিবে না তবুও গ্রাফিক্স প্রসেসিং এর জন্য যেটুকু প্রেসার সেটা র‍্যাম বা প্রসেসরের উপর না এসে

গ্রাফিক্স কার্ড নিজেই বহন করতে পারবে। দুর্ভাগ্যবশত গ্রাফিক্স কার্ড আপগ্রেড শুধুমাত্র ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য। আপনি যদি গেইমার না হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনাকে পরামর্শ দিবো ASUS GeForce GT610 ব্যবহার করার জন্য। আশা করছি এটা আপনার চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট হবে।

প্রত্যেক আধুনিক গ্রাফিক্স কার্ড PCI-E x16 স্লট ব্যবহার করে। মাদারবোর্ডে নীল এবং কালো রঙের দুটি PCI-E গ্রাফিক্স কার্ড স্লট থাকে। যেগুলো একেকটা ৪ ইঞ্চি করে লম্বা এবং তাদের দুই প্রান্তে ক্লিপ লাগানো থাকে। আপনার পিসি যদি ৫ বছরের বেশি পুরাতন না হয় তাহলে অবশ্যই আপনার পিসির মাদারবোর্ডে PCI-E স্লট রয়েছে।

যাহোক, নিজে নিজে যদি গ্রাফিক্স কার্ড লাগাতে চান তাহলে কম্পিউটারের মাদারবোর্ড খুলে কালার দেখে স্লট শনাক্ত করে গ্রাফিক্স কার্ড লাগিয়ে ফেলতে পারেন। তবে কালার না মিললেও সমস্যা নেই। কারন আমি যে কালারগুলোর কথা বলেছি সেগুলো কমন কালার হলেও ভিন্ন কালারও থাকতে পারে।

কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম

আপনার কম্পিউটার যদি অনেক পুরাতন হয় এবং এটি যদি খুব বেশি পরিমান র‍্যাম সংযোগের অনুপযোগী হয়, তাছাড়া আপনি যদি একজন ল্যাপটপ ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন যেখানে গ্রাফিক্স কার্ড আপগ্রেড করার কোন সুযোগ নেই তাহলে কী হবে? আপনার জন্য এক্ষেত্রে দুটি অপশন, প্রথমতো নতুন কম্পিউটার কেনা (এটা হলে অবশ্য আমার টিউন দেখার প্রয়োজন ছিলো না) এবং দ্বিতীয়তো হালকা ধরনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা।

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হলেও এর সিস্টেম রিসোর্স অনেক বেশি হেভি। সুতরাং কম্পিউটারকে কোন রকম ভালো ভাবে ব্যবহার উপযোগী করতে চাইলে উইন্ডোজের লেটেস্ট ভার্সনগুলোর কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। আপনি উইন্ডোজ এক্সপি কিংবা লিনাক্স বেইজড অপারেটিং সিস্টেমগুলো ব্যবহার করতে পারেন। উইন্ডোজ সেভেন ব্যবহার করতে চাইলে হোম বেসিক কিংবা স্টার্টারের উপরের কোন ভার্সন ব্যবহার করা যাবে না।

Solid State Drive – SSD ব্যবহার করা

কম্পিউটার স্লো হওয়ার পেছনে হার্ড ড্রাইভ অনেক অংশে দায়ী। এক্ষেত্রে কম্পিউটারকে ফাস্ট করতে চাইলে সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো Solid State Drive – SSD ব্যবহার করা। যদিও দামের দিক থেকে SSD ব্যবহার করা অনেক ব্যয়বহুল। কারন আপনি যদি ১২৮ গিগাবাইটের একটি SSD ড্রাইভ কিনতে চান তাহলে এর জন্য ৬, ০০০-৭, ০০০ টাকা খরচ করতে হবে। তবে পারফরমেন্সের ব্যাপারে আপনি থাকবেন সুপার স্পিডি। তবে সামর্থ্য থাকলে SSD নয় কেন?

আপনি যদি পুরাতন কম্পিউটার ব্যবহার করতে করতে হাঁপিয়ে উঠে থাকেন তাহলে উপরের পদ্ধতিগুলো হয়তো আপনার জীর্ণ কম্পিউটারে একটা নতুন জীবনের সূচনা ঘটাবে। সুতরাং প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার কম্পিউটারকে আজই আপগ্রেড করে ফেলুন এবং উপভোগ করুন দ্রুতগতির কম্পিউটিং এর মজা।

তবে আপনাদের যদি কম্পিউটার ফাস্ট করার জন্য আরও কোন উপায় জানা থাকে তাহলে টিউমেন্ট অপশনে জানাতে পারেন। আপনার মতামতের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আর কম্পিউটার ফাস্ট করার মিশন এখানেই শেষ নয়। আরও কিছু এক্সক্লুসিভ কালেকশন নিয়ে আসছি আগামী টিউনগুলোতে। আশা করছি আপনারা আমার কোন টিউন মিস করবেন না। আপনাদেরকে আপডেট রাখার জন্যই তো আমার সকল প্রচেষ্টা.

শেষ কথা

টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আশাকরি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।

আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ

Level 7

আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 158 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভাই, gt 610 আর redeon hd 5450 এই দুটোর মধ্যে কোন্টা ভালো হবে? জানা থাকলে দামটা বলবেন আর এই দুইটা কার্ড কি intel pentium processor এর সাথে ব্যবহার করা যাবে?

    আমি গ্রাফিক্স কার্ড বিষয়ে ভালো এক্সপার্ট না। কারন আমি ল্যাপটপ ইউজার। আপনি একটু ওদের প্রোডাক্ট পেইজগুলো ঘেটে দেখবেন। অক্ষমতার জন্য দুঃখিত 🙁

বরাবরের মত অসাধারণ টিউন।ধন্যবাদ

Ajaira tune…vabsilam kisu way te present computer fast korar system bolben…

    অনেক দিন পর কেউ একজন সত্য কথাটি বললো :mrgreen: আসলে আমার অধিকাংশ টিউনই আজাইরা। কেন যে পাবলিকে পড়ে বুঝিনা 🙄 যাহোক আপনি বুঝতে পারছেন জেনে ভালো লাগলো 😆 তবে ভুমিকাটা মনে হয় পড়েননি 🙁 যাহোক, টিউমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ বিড়ালের বাবা 🙄

সফটওয়্যার কেন্দ্রিক কম্পিউটার স্লো হলে, স্লো কম্পিউটার আমরা কোন কোন সফটওয়্যার দিয়ে সহজেই সারিয়ে তুলতে পারি তা নিয়ে টিউন করবেন আশা করি ।

    তা তো অবশ্যই। কম্পিউটারের যাবতীয় সমস্যাগুলো নিয়ে একগাদা টিউন করার পরিকল্পনা আছে। সামনে শুধু দেখতে থাকুন।

এই ধরনের টিউন করে টিউমেন্টের কথা বলতে হয়না ভাই।
চালিয়ে যাবেন প্লিস।

ভাই , একাধিক র‍্যামের ক্ষেত্রে বাস স্পিড সমান অবশ্যই থাকতে হবে কেন ?

    একাধিক র‍্যামের ক্ষেত্রে বাস স্পিড সমান না হলে সিপিইউ এর উপর চাপ পড়ে। সেক্ষেত্রে সিপিইউ ইউজ ম্যাক্সিমাম টাইম ১০০% থাকে।

আপনার টিউনে দেওয়া গ্রাফিক্স কার্ড এর ছবিটা Sapphire graphics card এর তাই না । এই গ্রাফিক্স কার্ডটা একসময় আমি ব্যবহার করতাম ।

    এটা ASUS GeForce GT610 মডেলের গ্রাফিক্স কার্ড। ছবিটা গুগল থেকে প্রাপ্ত, আমি বাস্তবে গ্রাফিক্স কার্ড দেখিনি 🙁

SSD ও HDD এর পাথক্য কি ? বিস্তারিত জানালে খুশি হতাম ।

বি.দ্র : ভাই অনেক গুলো প্রশ্ন করলাম আশা করি কিছু মনে করবেন না । আমার আবার জানার আগ্রহ বেশি , তাই প্রশ্নও করি বেশি ।

    এ ব্যাপারে সংক্ষেপে কিছু বলা যাবে না। আপনি বেশি আগ্রহী থাকলে নিচের লিংক থেকে জেনে নিতে পারেন। শুধুমাত্র জানার জন্য এটা অনেক ভালো রিসোর্স।

    http://www.diffen.com/difference/HDD_vs_SSD

superb thnx bro

পড়তে পড়তে যদিও ভেবে ছিলাম নিচের দিকে হইত আনকোরা লেটেস্ট কোন সফটওয়্যার পাবো । 🙂
ধন্যবাদ…

    সব সময় সফটওয়্যারের ধান্ধায় থাকলে হবে? মাঝে মাঝে অন্য কিছুও দেখতে হয়। যাহোক, সামনের টিউনে আপনাকে হতাশ করবো না। অন্তত ৫০ জিবি ডাটা নিয়ে টিউন পড়তে আসবেন। ডাউনলোড দিতে দিতে যেন ক্লান্ত হতে না হয়।

ধন্যবাদ !

সুন্দর টিউন করেছেন ভাই

Level 0

Nic post

থ্যাংকস ।
একটা প্রশ্ন ছিল –
ল্যাপটপে বেশি র‍্যাম লাগালে সিপিইউ ব্যবহার প্রায় ১০০% হয়ে যেতে পারে – এর কারন কি ?

    উত্তরটা বলতে পারছি না। তবে বিষয়টা পরিক্ষীত। আমি নিজে এটা বিভিন্নভাবে টেস্ট করেছি।