রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা হোক তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ আবদুল কাদেরকে

প্রতিটি দেশেই এমন কিছু ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যারা তাদের কর্মজীবনের মাধ্যমে নিজেদের স্মরণীয়-বরণীয় করে তুলেছেন। জাতি তাদের জীবদ্দশায় কিংবা মরণোত্তর পর্যায়ে নানাভাবে সম্মানিত করে থাকে। বাংলাদেশেও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী ব্যক্তিদের সম্মানিত করার ব্যবস্থা রয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পদক প্রদানের মাধ্যমে প্রতিবছর জাতীয় পর্যায়ের কৃতী সমত্মানদের সম্মানিত করা হয়। এবছরেও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে ধারণা করা যায়।

৩ জুলাই, ২০০৯ মরহুম অধ্যাপক আবদুল কাদেরের সপ্তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে লিখতে গিয়ে, আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে মনে হয়েছে, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক বলে খ্যাত ও মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা মরহুম অধ্যাপক আবদুল কাদের তেমনি একজন ব্যক্তিত্ব, যিনি তার কর্মসূত্রেই একুশে পদক কিংবা স্বাধীনতা পদক পাবার দাবি রাখেন।

অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদের স্কুলজীবন থেকেই ছিলেন প্রচন্ডভাবে প্রযুক্তিপ্রেমী। স্কুলজীবনেই তিনি ‘টরেটক্কা’ নামে একটি মাসিক বিজ্ঞান সাময়িকী প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি নিয়মিতভাবে প্রতি মাসে প্রকাশিত হতো প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়েও। অধ্যাপক আবদুল কাদের মৃত্তিকা বিজ্ঞানের অধ্যাপক হলেও কমপিউটারের প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে কমপিউটারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ম্যাগাজিন সংগ্রহ করে পড়তেন এবং নিজে কমপিউটারের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ‘কমপিউটার লাইন’ নামে একটি কমপিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেন। ১৯৮৯ সালে আজিমপুর চায়না বিল্ডিংয়ের গলিতে এ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী  শফিকুল গনি স্বপন। কমপিউটার লাইন চালু করার পর থেকেই তিনি বাংলায় কমপিউটারবিষয়ক ম্যাগাজিন প্রকাশনার চিমত্মাভাবনা শুরু করেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের পরামর্শও নেন। সে সূত্রেই তিনি ১৯৯১ সালে মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর প্রকাশনা শুরু করেন।

কমপিউটার যে দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার হতে পারে সে উপলব্ধিতে আবদুল কাদের তার পত্রিকা কমপিউটার জগৎ-এর প্রথম প্রকাশনা শুরু করেন ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ স্লোগান নিয়ে। এখন সরকার ঘোষিত যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে এটি মূলত কমপিউটার জগৎ-এর মূল স্লোগান বা দাবি ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’-এর ধারাবাহিক ফসল বা বলা যেতে পারে আধুনিক সংস্করণ।

অত্যমত্ম দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ আবদুল কাদের তখন থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া অত্যমত্ম সম্ভাবনাময় এ ক্ষেত্রটি এগুতে পারবে না। তখন কমপিউটার সম্পর্কে এদেশে মানুষের কোনো ধারণা ছিল না। আর সরকারি মন্ত্রী-আমলাদেরও কমপিউটার সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না।  সে সময় কোনো এক সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও কমপিউটারকে ‘শয়তানের বাক্স’ বলে অভিহিত করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। শুধু তাই নয়, তখন কেউ তাকে সাহস বা উৎসাহ দিতে না পারলেও নেতিবাচক মমত্মব্য করতে দ্বিধাবোধ করেননি। এমনকি বাংলায় কমপিউটারবিষয়ক ম্যাগাজিন প্রকাশনার কাজে হাত দেয়াকে অতিসাহসী বা পাগলামো উদ্যোগ হিসেবে মমত্মব্য করেন অনেকেই। কেউ কেউ তো চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন, এ পত্রিকা ধারাবাহিকভাবে তিন থেকে চার সংখ্যার বেশি বের হবে না।

অন্যান্য আইটিবিষয়ক পত্রিকার প্রেরণার উৎস

শুরু থেকেই আমি কমপিউটার লাইনের পুরো ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলাম। পাশাপাশি কমপিউটার জগৎ পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকেই এর সব কর্মকান্ডের সাথে ছিলাম এবং আজো এর সাথে জড়িত আছি এর সহযোগী সম্পাদক হিসেবে।

সেই সূত্রেই জেনেছি, আইটিবিষয়ক লেখক সৃষ্টি ও নতুন নতুন আইটি ম্যাগাজিনের প্রেরণার উৎস ছিলেন আবদুল কাদের। কমপিউটার জগৎ পত্রিকা প্রকাশের সম্ভবত মাস দুয়েক আগে অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদের তার এক ঘনিষ্ঠ স্কুলবন্ধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ভূঁইয়া ইকবালের ছোট ভাই ভূঁইয়া ইনাম লেলিনকে কমপিউটার জগৎ-এর প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দেন। যিনি পরবর্তীতে ‘কমপিউটার বিচিত্রা’ নামে আরেকটি কমপিউটারবিষয়ক মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন সম্ভবত ১৯৯৫ সালে। কমপিউটার জগৎ প্রকাশনার কয়েক মাস পর কমপিউটার লাইনের ছাত্র মো: তারেকুল মোমেন চৌধুরী সহকারী সম্পাদক হিসেবে কমপিউটার জগৎ-এ যোগ দেন। তিনি পরবর্তী সময় ‘কমপিউটার ভূবন’ নামে পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন সম্ভবত ১৯৯৭-৯৮ সালে। ১৯৯২ সালে বুয়েটের ছাত্র জাকারিয়া স্বপন কমপিউটার জগৎ-এ সহযোগী সম্পাদক হন। তিনিও বছর দুয়েক পরে ‘কমপিউটিং’ নামে পত্রিকার সাথে যুক্ত হন নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে। অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদেরের অত্যমত্ম ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রতিবেশীর ছেলে ইকো আজহার ঢাকা ভার্সিটির কমপিউটার সায়েন্সের ছাত্রাবস্থায় কমপিউটার জগৎ-এ লেখালেখি শুরু করেন। পরে এই পত্রিকার প্রথমে সহযোগী ও পরে কারিগরী সম্পাদক হন। এরপর তিনি ইত্তেফাক পত্রিকার কমপিউটারের পাতা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। গোলাম নবী জুয়েল ১৯৯২ থেকে কমপিউটার জগৎ-এ লেখালেখি শুরু করেন এবং ডিসেম্বর মাসে কমপিউটার জগৎ-এর লেখক সম্পাদক হিসেবে উন্নীত হন। গোলাম নবী জুয়েল পরে কমপিউটার বিচিত্রার সাথে সম্পৃক্ত হন এবং সেখানে নিয়মিতভাবে লেখালেখি শুরু করেন। এভাবে শামীমু্জ্জামান প্রমি, মোসত্মফা স্বপন, হাসান শহীদ, শামীম আখতার তুষার, ফাহিম হুসাইন, ইথার হান্নান, জেসান রহমান, ওমর আল জাবির মিশো, আবু সাঈদ, শোয়েব হাসান, নাদিম আহমেদ, জিয়াউস শামছ এমনি একঝাঁক প্রতিশ্রুতিশীল তরুণের কমপিউটার বিষয়ে লেখালেখির হাতেখড়ি অধ্যাপক আবদুল কাদেরের কাছে। তেমনি বেশ কিছু কমপিউটারবিষয়ক পত্রিকার পরোক্ষভাবে প্রেরণার উৎসাহ ছিলেন অধ্যাপক আবদুল কাদের। সুতরাং বলা যেতে পারে, অধ্যাপক আবদুল কাদেরের তথা কমপিউটার জগৎ-এর অন্যতম একটি সাফল্যের দিক হলো আইটিসংশ্লিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক তৈরিতে বিরাট ভূমিকা রাখা। বর্তমানে আইটিতে যারা লেখেন বা সিনিয়র লেখক বা এক্ষেত্রে মূলধারার লেখক আছেন যাদের আইটি সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না, অধ্যাপক আবদুল কাদের তাদেরকে দিয়ে আইটিবিষয়ক লেখালেখি করিয়েছেন। পরে তাদের অনেকেই এখন আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। বর্তমানে অনেক আইটি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে এবং অনেক দৈনিকে নিয়মিতভাবে আইটি বিষয়ে কিছু অংশ বরাদ্দ করা হয়েছে, যার প্রেরণার উৎস হচ্ছেন অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদের। শুধু আইসিটি বিষয়ে যে সাংবাদিকতা চলতে পারে, তারও পথপ্রদর্শক মরহুম অধ্যাপক আবদুল কাদের। আজ দেশে প্রচুর প্রতিষ্ঠিত আইটি সাংবাদিক রয়েছেন। এসব সাংবাদিকের একটি ফোরামও সফলভাবে কাজ করছে।

মরহুম আবদুল কাদের যেমনি ছিলেন অত্যমত্ম দূরদৃষ্টিসম্পন্ন তেমনি ছিলেন অত্যমত্ম প্রচারবিমুখ। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে বা দাবি আকারে উপস্থাপন করতে তিনি নিজে না লিখে দেশের বিখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্টদের দিয়ে কমপিউটার জগৎ-এ লিখিয়েছেন। সেজন্য তিনি এসব প্রখ্যাত সাংবাদিককে প্রয়োজনীয় রসদ বা তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় গাইডলাইন দিতেন। এজন্য আবদুল কাদেরকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারণী মহলের কাছে এবং জনগণের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলার উদ্দেশ্যে  তিনি এসব প্রখ্যাত সাংবাদিকদের দিয়ে নিয়মিতভাবে কমপিউটার জগৎ-এ লিখিয়েছেন যাতে সব মহলে দাবিগুলো গ্রহণযোগ্যতা পায়। কমপিউটার জগৎ-এ নিয়মিতভাবে আইটিবিষয়ক লেখালেখি করে অনেকে রীতিমতো আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। এসব বিখ্যাত সাংবাদিকের মাঝে অন্যতম হলেন নাজিম উদ্দিন মোসত্মান, আবীর হাসান, আজম মাহমুদ, কামাল আরসালান, তাজুল ইসলাম, গোলাপ মুনীর প্রমুখ।

পাঠক সৃষ্টিতে আবদুল কাদের

কমপিউটার জগৎ যখন তার প্রকাশনা শুরু করে, তখন বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে কমপিউটার সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। শুধু তাই নয়, শিক্ষিত সমাজের অনেকেই মনে করতেন কমপিউটারের ব্যাপক প্রসার হলে দেশের বেকারত্ব ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারকদের মনে ছিল কমপিউটার ভীতি। এরা ছিলেন কমপিউটারের ব্যাপক ব্যবহারের  বিরুদ্ধে। এমন অবস্থায় কমপিউটারসংশ্লিষ্ট বাংলা পত্রিকা বের করা রীতিমতো এক দুঃসাহসিক কাজ ছিল।

যেহেতেু আবদুল কাদের কমপিউটার বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করতেন এবং আমত্মর্জাতিক বাজারে কমপিউটারের চলমান প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা রাখতেন, তাই কমপিউটার জগৎ-এর প্রকাশনার শুরু থেকেই এমন সব বিষয়ে লেখার পরিকল্পনা করেন, যা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পায় এবং কমপিউটার সম্পর্কে জনমনে ভীতি দূরীভুত হয়। তাই এদেশের জনগণের হাতে কমপিউটার তুলে দেবার দাবি জানিয়ে ১৯৯১ সালের ১ মে ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ স্লোগানধর্মী প্রচ্ছদ প্রতিবেদন দিয়ে শুরু করেন কমপিউটার জগৎ-এর যাত্রা। এ সময় কমপিউটার এবং কমপিউটারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের ওপর ছিল ব্যাপক কর। কমপিউটারের ব্যাপক প্রসার করতে চাইলে এই হারে করারোপ অবশ্য প্রত্যাহার করা উচিত। এ উপলব্ধিতেই ১৯৯১ সালের জুন মাসে ‘বর্ধিত ট্যাক্স নয়, জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ শিরোনামে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপায় কমপিউটার জগৎ। এতে বলা হয় কমপিউটার হতে পারে বেকারত্ব দূর করার চাবিকাঠি ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির চালিকাশক্তি। এ জন্য দরকার স্বল্পমেয়াদি কিছু সহজ বিষয়ে কমপিউটার জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ। ডাটা এন্ট্রি ছিল এমনই এক ক্ষেত্র, যা ১৯৯০-১৯৯১ থেকে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। এ বিষয়ে অক্টোবর ১৯৯১ সালে ডাটা এন্ট্রি : অফুরমত্ম কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপিয়েই ক্ষামত্ম হননি অধ্যাপক আবদুল কাদের, এ নিয়ে কিছু সভা-সেমিনারও করেছেন।

অধ্যাপক আবদুল কাদের কমপিউটার জগৎ প্রকাশনার শুরু থেকে পরিকল্পনা করেন কমপিউটারের সুফল জনসাধারণের মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে। সেজন্য কমপিউটারপ্রযুক্তি প্রোগ্রামগুলোর ওপর বাংলা ভাষায় সহজবোধ্য করে কিছু বই প্রকাশ করতে হবে। কমপিউটারপ্রযুক্তিবিষয়ক বাংলা বই প্রকাশ সেসময় ছিল এক দুঃসাহসিক কাজ। এমনকি তা কল্পনা করাও ছিল এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। আবদুল কাদের  সাহসিকতার সাথে ৮টি বিষয়ে বাংলায় বই প্রকাশের উদ্যোগ নেন। সেগুলো ছিলো ডস, ওয়ার্ডস্টার, লোটাস, ডিবেজ, উইন্ডোজ, ওয়ার্ড পারফেক্ট, ট্রাবলশূটিং ও ডিটিপি। তিনি এই বইগুলো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বাইরে বিক্রি না করে কমপিউটার জগৎ-এর গ্রাহকদের ফ্রি দিতেন। এই বইগুলো প্রকাশের পরপর তিনি পত্রিকায় এক ঘোষণা দেন, যা নিয়মিতভাবে প্রতি মাসে কমপিউটার জগৎ-এ প্রকাশিত হতো। কেউ এ পত্রিকার এক বছরের গ্রাহক হলে পছন্দমতো বিনামূল্যে যেকোনো দুইটি বই ফ্রি পাবেন। এই গ্রাহক যদি অপর কাউকে গ্রাহক করেন, তাহলে তিনি আরো দুটি বই ফ্রি পাবেন এবং নতুন গ্রাহকও অনুরূপভাবে তার পছন্দমতো দুটি বই ফ্রি পাবেন। এভাবে রাতারাতি কমপিউটার জগৎ-এর গ্রাহক সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়, যা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। বলতে বাধা নেই আমি, ভূঁইয়া ইনাম লেলিন ও তারেকুল মোমেন চৌধুরী প্রবলভাবে মরহুম আবদুল কাদেরের এ কার্যক্রমের বিরোধী ছিলাম। আমরা তিনজনই এমন কার্যক্রমকে নিছকই পাগলামো মনে করতাম। কেননা, সে সময় কমপিউটার জগৎ-এর আয়ের তুলনায় ব্যয় অনেকগুণে বেড়ে গিয়েছিল। তিনি শুধু আমাদের বলতেন, ‘‘প্রথমে জাতিকে সেবা দাও, সব সময় ব্যবসায় করতে চেয়ো না’’। তিনি মনে করতেন, পাঠক বাড়লে, কমপিউটারের ব্যাপারে জনসচেতনতা যেমন বাড়বে, তেমনি এ সংশ্লিষ্ট যৌক্তিক দাবিগুলোর প্রতি জনসমর্থনও বাড়বে, যা প্রযুক্তি আন্দোলনকে বেগবান করবে। উপরোল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, আবদুল কাদের দেশে কমপিউটারবিষয়ক পাঠক বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা পরবর্তী পর্যায়ে নতুন নতুন পত্রিকার সৃষ্টি বা সূচনা করতে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে।

অনন্য কিছু অবদান

এ শিল্প সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি একাধিক সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন, আয়োজন করেছেন বিভিন্ন ক্যুইজ প্রতিযোগিতা, গুণী ও মেধাবীদের সম্মানিত করে জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। শুধু তাই নয়, কমপিউটারকে সর্বসাধারণের মধ্যে পরিচিত করার লক্ষ্যে তিনি ঢাকার জিঞ্জিরায়, কুমিল্লার মুরাদনগর ও ভোলায় কমপিউটার নিয়ে যান। দেশের তরুণ মেধাবীদের উৎসাহিত করতে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ইন্টারনেট সপ্তাহ ও কমপিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করতে যেমন- ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ওপর একাধিক সংবাদ সম্মেলন, মোবাইল ফোনের ব্যাপক প্রসারের জন্য সর্বপ্রথম জোরালো দাবি তুলে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছেন- ‘স্ট্যাটাস সিম্বল নয়, চাই ব্যাপক জনগোষ্ঠীর হাতে মোবাইল ফোন’ যা সে সময় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এভাবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের দাবি, Y2K সমস্যা, ইউরোমানি কনভার্সন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু জাতির সামনে তুলে ধরেন।

সর্বসত্মরে কমপিউটারে বাংলা প্রয়োগ, বিজ্ঞানসম্মত বাংলা কী-বোর্ড ইত্যাদি বিষয় কমপিউটার জগৎ প্রকাশনার শুরুর বছরেই জাতির সামনে তুলে ধরেন অধ্যাপক আবদুল কাদের।

প্রগতিমনা, বিজ্ঞানমনষ্ক আবদুল কাদেরের মনন ও মসিত্মষ্কের অনুরণনে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন তথ্য ও তথ্যাবলী প্রতিনিয়ত প্রবহমান ছিল। তিনি চিমত্মা করতেন কী করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন করা যায়। কিভাবে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও অগ্রগতির চাকার সাথে আমাদের জাতীয় উন্নয়ন চাকাকে সমানতালে চালানো যায়। কিভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার খোলনলচে পাল্টে আমাদের মধ্যে পুরনো ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ ও উন্নয়নমুখী শিক্ষাব্যবস্থায় রূপামত্মর করা যায়। তিনি সব সময় বলতেন, আমাদের অদক্ষ জনশক্তিকে যথাযথ আইটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপামত্মরিত করতে হবে। দেশের আইটির মেধার সুষ্ঠু লালন ও পরিচর্যার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে হবে। আইটি খাতকে থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে ঘোষণা এবং কমপিউটার সামগ্রীর ওপর থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স পুরোপুরি প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে তিনি নিজের উদ্যোগে যোগাযোগ করতেন। এক্ষেত্রে আবদুল কাদেরের অবদান আইটি শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের চাইতেও বেশি ছিল, একথা অনেকেই স্বীকার করবেন তা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে। তবে আগামী প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তাদের মধ্যে মরহুম আবদুল কাদেরের অবদানকে তলে ধরতে হবে। সেই সাথে প্রয়োজন তাকে জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত করে, তার অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি দেয়া। এতে করে আগামী প্রজন্ম এ ধরনের আন্দোলনে উৎসাহিত হবে।

Level 0

আমি কমজগৎ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 57 টি টিউন ও 17 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

Computer Jagat has been involved with the ICT movement here in Bangladesh for more than a period of two decades. During this period we have been able to create a set of records for which we feel proud of.


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

সম্মানিত ব্যক্তিদের তাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া উচিত

ধন্যবাদ ভাল একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য।
সম্মানিত ব্যক্তিদের তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে।
কম্পিউটারের ধারনা দিক দিগন্তে পৌছে দিতে কমপিউটার জগৎ ম্যাগাজিনের কৃতিত্ব অনেক।
আমি নিজেই কমপিউটার জগৎ ম্যাগাজিনের নিকট অনেক ঋনি।

এতো ভাল বিষয়ে যিনি নিজের সবকিছুকে উজার করে দিতে পারেন তার জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মান ছাড়া অন্য কিছু দিলে। সম্মানের অবমননা হবে। 🙁

    সহমত, আর আপনাকে ধন্যবাদ বিষয়টি উপস্থাপন করায়।

আমি কম্পিউটার জগৎ এর নিয়মিত পাঠক। এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে আজ অনেক কিছু জানলাম। আমিও তাকে রাষ্ট্রীয় ভাবে সম্মানিত করার পক্ষে।
ধন্যবাদ।

আপনার সাথে একমত আশা রাখি সরকার বিবেচনা করবেন

অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদেরের সাহেবের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি আল্লাহ যেন উন্নাকে শান্তিতে রাখেন।
সবাই বলেন রাষ্ট্রীয় সম্মান দেয়া উচিত আমিও একমত,কিন্তু দেখতে হবে আমাদের দেশে যেই মাপ কাঠিতে বেশীর ভাগ রাষ্ট্রীয় পুরুষ্কার গুলু দেয়া হয় উনি সেই খানে আছেন কিনা,
প্রথমে দেখতে হবে উনি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জরিত ছিলেন কিনা সরাসরি অথবা অন্যকোন ভাবে(তাহলে সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় থাকলে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে) এবং বর্তমানে উনার কোন আত্বীয় স্বজন রাষ্ট্রীয় কোন পদে আছেন কিনা কিংবা সরকারী দলের সাথে ভাল ভাবে জরিত কিনা অথবা সরকারি দলকে বড় ধরনের চাঁদা দিতে পারে কিনা(যেই সরকারই থাকুক)।এই সব গুনাবলি থাকলে দেখবেন পুরুষ্কার ঠেকায় কে!
আমার মন্তব্যটা অন্য ভাবে নিবেন্না দেখবেন বর্তমানে আমাদের দেশে যোগ্যতার চেয়ে সমর্থনকে বিচার করে রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার গুলা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেয়া হচ্ছে।

    Level 2

    আপনার সাথে একমত

আপনার সাথে একমত ধন্যবাদ।