কম্পিউটার ভাইরাস ও এন্টিভাইরাস কি

হ্যালো বন্ধর কেমন আছেন। আশাকরি ভালো আছ, আজকের আলোচনা হলো ভাইরাস বা কম্পিউটার ভাইরাস নিয়ে।

কম্পিউটার ভাইরাস একটি ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম। কম্পিউটার ভাইরাস বাহিরের উৎস থেকে কম্পিউটারের মেমোরিতে প্রবেশ করে মেমোরিতে গোপনে বিস্তার লাভ করে মূল্যবান প্রোগ্রাম, তথ্য নষ্ট করা ছাড়াও অনেক সময় কম্পিউটারকে অচল করে দেয়। সিআইএইচ ভাইরাসের রচয়িতা “চেন ইং হাও”।

ভাইরাসের নামকরণ

কম্পিউটারের পরিভাষায় ভাইরাস (VIRUS) শব্দটিকে ভাঙলে পাওয়া যায় 'ভাইটাল ইনফরমেশন রিসোর্সেস আন্ডার সিজ (Vital Information Resources Under Seize) - অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। প্রখ্যাত গবেষক 'ফ্রেড কোহেন' ভাইরাস নামকরণ করেন।

ভাইরাসের ইতিহাস

১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের দুই প্রোগ্রামার আমজাদ ও বাসিত উপলব্ধি করল ফ্লপি ডিস্কের বুটসেক্টর executable কোড ধারণ করে এবং এ কোড কম্পিউটার চালু করলেই রান করে যদি ড্রাইভে ডিস্ক থাকে। তারা আরও উপলব্ধি করল যে এ কোড তাদের নিজস্ব প্রোগ্রাম (কোড) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় যা মেমোরি রেসিডেন্ট প্রোগ্রাম হতে পারে। এবং যা নিজের কপি তৈরি করতে সক্ষম। প্রোগ্রাম নিজের অনুলিপি তৈরি অর্থাৎ ভাইরাসের মতো বিস্তার ঘটাতে পারে বলে তারা এর নাম দেয় 'ভাইরাস'। কিন্তু এটি শুধু ৩৬০ কিলোবাইট ফ্লপি ডিস্ককে সংক্রমিত করে। ১৯৮৭ সালে University of Delaware-এ কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। কম্পিউটার শুরু করে ফ্লপি ডিস্কের লেবেল '(c) Brain' লেখা দেখার মাধ্যমে কম্পিউটার ভাইরাসের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। এটিই প্রথম ভাইরাসের আক্রমণ এবং এটি ড. সলেমন পর্যবেক্ষণ করেন। এ ভাইরাসের উপস্থিতি প্রথম উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈকা কম্পিউটার মহিলা কর্মী দেখে একে ভাইরাস বলে মনে করেন এবং ডিস্ক থেকে ডেটা পুনরুদ্ধার কাজে নিমগ্ন ড. সলেমনের শরণাপন্ন হন। ড. সলেমন একে বিশ্লেষণ করেন এবং এভাবে তিনি এন্টিভাইরাস ব্যবসায়ে আসেন।

১৯৮৭ সালে Charlie, Vienna নামক ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যা মেশিনকে Hang ও রিবুট করে দেয়। ইতোমধ্যে ইসরালের তেলআবিবে অন্য একজন প্রোগ্রামার Suriv-01 নামে ভাইরাস তৈরি করে। এটি ছিল মেমোরি রেসিডেন্ট ভাইরাস কিন্তু এটি com ফাইলকে আক্রমণ করতো। এভাবে প্রতি বছর নতুন নতুন অনেক ভাইরাস তৈরি হয় এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। ৯৯ এর ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার সিআইএইচ বা চেরনোবিল নামক ভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। টাইম বোমার ন্যায় নির্দিষ্ট সময়ে এ ভাইরাসটি কম্পিউটারকে আক্রান্ত করে। একই সময়ে সারাবিশ্বে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার এটিই সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা। বাংলাদেশে ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের অসংখ্য পিসি ছাড়াও এ ভাইরাস।

সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, ব্যাংক, বিমা কোম্পানি, সেলুলার ফোন কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট হাউসের বহু সংখ্যক কম্পিউটার অচল করে দেয়। ২০০১ ও ২০০২ এ মেলিসা নামক ইন্টারনেট ভাইরাসের আক্রমণে অনেক ওয়েব সার্ভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ই-মেইলের এটাচমেন্ট ফাইলের সাথে আসা এ ফাইলটিও ভয়াবহ আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

মেলওয়্যার (Malware)

মেলওয়্যার (Malware) একটি ইংরেজি শব্দ যার পূর্ণ শব্দরূপ হলো Malicious Software। সাধারণভাবে মেলওয়্যার বলতে সেই সমস্ত সফটওয়্যারকে বোঝানো হয়, যে সফটওয়্যারগুলো ডিজাইন করা হয় ব্যবহারকারীর অজান্তে কোনো কম্পিউটারে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে উক্ত কম্পিউটার সিস্টেমের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে। যদিও কম্পিউটার ভাইরাসও একই উদ্দেশ্যে ডিজাইন করা হয়ে থাকে তথাপি মেলওয়্যার এবং কম্পিউটার ভাইরাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পার্থক্য রয়েছে। মেলওয়্যার সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য কম্পিউটার ভাইরাসের সাথে মেলওয়্যারের পার্থক্য বোঝাটা অত্যন্ত জরুরী।

ম্যালওয়্যার

কম্পিউটার ভাইরাস হলো এমন এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীর অনুমতি বা ধারণা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজে নিজেই কপি হতে পারে এবং এটি কম্পিউটার সিস্টেমে থাকা বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রোগ্রামকে আক্রান্ত করে থাকে। অপরপক্ষে মেলওয়্যার আরও অনেক বিস্তৃত একটি টার্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয় যার অন্যতম সাধারণ একটি টাইপ হচ্ছে কম্পিউটার ভাইরাস।

কম্পিউটার ভাইরাস ছাড়াও মেলওয়্যারের অন্তর্ভুক্ত সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে রয়েছে স্পাইওয়্যার, অ্যাডওয়্যার, ট্রোজান হর্স, ওয়ার্ম প্রভৃতি। এগুলোর প্রতিটির টাইপ বা প্রকৃতি ভিন্ন হলেও এদের উদ্দেশ্য এক অর্থাৎ কম্পিউটার সিস্টেমে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং এর ক্ষতিসাধন করা। এজন্য এগুলোর প্রত্যেকটি মেলওয়্যারের এক একটি টাইপ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এমনকি আর্থিক প্রতারণা বা অবৈধ উপায়ে অর্থ আদায়ে ব্যবহৃত সফটওয়্যারগুলোকেও অ্যাডভান্স লেভেলের মেলওয়্যার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মেলওয়্যার (Malware) এর উদ্দেশ্য

১. বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা কৌতুককর কোন কিছু উপস্থাপনের জন্য।

২. পাবলিক সিস্টেমের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

৩. অনলাইন বিপণন বাণিজ্য।

৪. বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মেলওয়্যারগুলো তৈরি করা হয় ফোর্স অ্যাডভার্টাইজিং বা জোর পূর্বক বিপণনের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন, কোনো কম্পিউটার থেকে ব্যবহারকারীর অজান্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি, ই-মেইল স্প্যাম ছড়ানো, কম্পিউটার সিস্টেমকে জিম্মি করে জোরপূর্বক অর্থ আদায় ইত্যাদি উদ্দেশ্যগুলোকে সামনে রেখে। এন্টিভাইরাস কম্পিউটার ভাইরাসের প্রতিষেধক প্রোগ্রামকে এন্টি ভাইরাস বলা হয়। কয়েকটি বহুল প্রচলিত এন্টিভাইরাস হলো ম্যাকএফির ভাইরাস স্ক্যান, নটন এন্টি ভাইরাস, আইবিএম এন্টি ভাইরাস, পিসি সিলিন ইত্যাদি।

ভাইরাসের প্রকারভেদ

* তাৎক্ষণিক ক্রিয়াশীল ভাইরাস : এ জাতীয় ভাইরাসের আক্রমণের ফলে কম্পিউটারে তাত্ক্ষণিক অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আক্রমণের পরে পুনরায় কম্পিউটার চালু করা হলে ভাইরাসের লক্ষণ

বুঝা যায়। বুট সেক্টর ভাইরাস এরূপ তাৎক্ষণিক অসুবিধার সৃষ্টি করে। ২. ক্রম ক্রিয়াশীল ভাইরাস : এ জাতীয় ভাইরাস কম্পিউটারে আক্রমণের পর ধীরে ধীরে কম্পিউটার সিস্টেমে আধিপত্য বিস্তার করে এবং একসময় কম্পিউটারের স্বাভাবিক কাজকে অচল করে দেয়।

* টাইম বম্ব ভাইরাস : এ জাতীয় ভাইরাস দীর্ঘ সময়ব্যাপী কম্পিউটারে লুকিয়ে থাকে। তারপর কোন নির্দিষ্ট দিনে সজীব হয়ে কম্পিউটারের ক্ষতি সাধন করে। যেমন- জেরুজালেম-বি ভাইরাস। এ ভাইরাস বছরের ১৩ তম শুক্রবারে আক্রমণ চালিয়ে সকল ফাইল নষ্ট করে দেয়। বর্তমান সময়ের আলোচিত ভাইরাস উইন-৩২ সিআইএইচ ভাইরাস প্রতিবছর ২৬ এপ্রিল কম্পিউটারকে আক্রমণ করে।

জৈবিক ভাইরাস ও কম্পিউটার ভাইরাস এর তুলনামূলক :

জৈবিক ভাইরাস

কম্পিউটার ভাইরাস

১. জৈবিক দেহ ছাড়া ভাইরাস এর প্রকাশ ঘটে না।

২. জৈবিক ভাইরাস প্রথমে পোষকের দেহে প্রবেশ করে, এরপর নিজের বংশ বিস্তারের মাধ্যমে পোষকের দেহে আধিপত্য বিস্তার করে। ফলে পোষকের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়।

৩.জৈবিক ভাইরাসে আক্রান্ত কোন জীবের সংস্পর্শে অপর কোন সুস্থ জীব এলে, ঐ ভাইরাস সুস্থ জীবে প্রবেশ করে।

৪. জৈবিক ভাইরাস থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রতিষেধক হিসাবে এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হয়। এই এন্টিবায়োটিক পোষকের দেহে ভাইরাসকে ধ্বংস করে।

আবার,

১. কম্পিউটার ছাড়া কম্পিউটার ভাইরাসের প্রকাশ পায় না।
২. কম্পিউটার ভাইরাস প্রথমে কোনো একটি কম্পিউটারে প্রবেশ করে, অতঃপর কপির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় বিস্তার ঘটিয়ে কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ফলে কম্পিউটারের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়।

৩. কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো সিস্টেম ভাইরাসবিহীন কোনো সুস্থ কম্পিউটারের সংস্পর্শে এলে এটিও ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।

৪. কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে মুক্ত করতে হলে এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ব্যবহার করতে হয়।

ভাইরাস কম্পিউটারকে যে ধরনের ক্ষতি করে ১. কম্পিউটারে সংরক্ষিত কোনো ফাইল মুছে দিতে পারে।

২. ডাটা বিকৃত (Corrupt) করে দিতে পারে।

৩. কম্পিউটারে কাজ করার সময় আচমকা অবাঞ্ছিত বার্তা প্রদর্শন করে। ৪. কম্পিউটার মনিটরের স্ক্রিনে ডিসপ্লেকে বিকৃত (Corrupt) করে দিতে পারে।

৫. একটি সিস্টেমের কাজকে ধীরগতি সম্পন্ন করে দিতে পারে।
308

কম্পিউটারে ভাইরাস অনুপ্রবেশ বন্ধ করার উপায়সমূহ ১. অন্য কম্পিউটারে ব্যবহৃত সিডি, ডিস্ক ইত্যাদি নিজের কম্পিউটারে ব্যবহারের পূর্বে ঐগুলিকে ভাইরাস যুক্ত

করে নেওয়া। ২. অন্য কম্পিউটার থেকে কপিকৃত সফটওয়্যার নিজের কম্পিউটারে ব্যবহারের আগে সফটওয়্যার ভাইরাস যুক্ত করে নেওয়া।

৩. অন্য কম্পিউটারের কোনো ফাইল নিজের কম্পিউটারে ব্যবহারের পূর্বে ফাইলটিকে যে ডিস্ক বা সিডির মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে উক্ত সিডি বা ডিস্ককে ভাইরাস মুক্ত করা। ৪. ইন্টারনেট থেকে কোনো সফটওয়্যার ভাইরাস থাকলে উহা অন্যান্য কম্পিউটারে ভাইরাস সংক্রমিত করে।

৫. অন্যান্য কম্পিউটারে ব্যবহৃত সফটওয়্যার কপি করে ব্যবহার না করা।

৬. কম্পিউটারে সর্বদা এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার রাখা। যাতে সতর্ক থাকা সত্ত্বেও যদি কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করে থাকে তাহলে সতর্কতামূলক সাউণ্ড শোনাবে কিংবা বার্তা প্রদর্শন করবে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী ভাইরাস ক্লিন করা যাবে।

৭. বাজারে প্রচলিত এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার লেটেস্ট ভার্সনা সর্বদা ব্যবহার করা। কারণ, পুরাতন ভার্সনের

এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার অনেক সময়ে আপটুডেট ভাইরাস শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়।

৮. প্রতিদিনের এন্ট্রিকৃত ডাটাসমূহ বা ফাইলসমূহ আলাদা কোনো ডিস্ক বা সিডিতে ব্যাকআপ রাখা, তবে আলাদা ডিস্ক বা সিডিটা অবশ্যই ভাইরাসমুক্ত কীনা তা নিশ্চিত হতে হবে।

৯.ই-মেইল আদান-প্রদানে সতর্কতা অবলম্বন করা। যেমন : সন্দেহজনক এমন সোর্স থেকে ই–মেইল রিসিভ

না করা। অথবা করলেও সাথে সাথে উহাকে ভাইরাস মুক্ত করা।

১০. কম্পিউটারের সেটআপ-এ অটোভাইরাস গার্ড রাখা। যেন কম্পিউটার বুট করলেই কম্পিউটার অটোমেটিক্যালি

ভাইরাস চেক করতে পারে।

১১. গেম ফাইল ব্যবহারে বেশি সতর্ক থাকা। কারণ, গেম ফাইলসমূহ বেশি বেশি কপি হয়ে ব্যবহৃত হয়। গেম ফাইল ব্যবহারের আগে অবশ্যই ভাইরাস চেক করতে হবে।

১২. COM, EXE ইত্যাদি ফাইলসমূহ শুধুমাত্র পঠন করা উত্তম।

১৩. যে সমস্ত ভাইরাস নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কম্পিউটারের ক্ষতি সাধন করে সেই সমস্ত ভাইরাসের ব্যাপারে অতি মাত্রায় সতর্ক থাকা। যেমন : গত ২৬ শে এপ্রিল, ১৯৯৯ এ সংঘটিত ভাইরাস বিস্ফোরণটা ছিল সিআইএইচ ভাইরাসের নির্দিষ্ট সময় ভিত্তিক বিস্ফোরণ। এ ব্যাপারে সতর্কতা সহজে অবগত হওয়ার জন্য দৈনিক পত্রিকাসহ প্রচলিত কম্পিউটার ম্যাগাজিনসমূহ নিয়মিত পড়া দরকার।

ভাইরাস ও মেলওয়্যার (Malware) এ আক্রান্ত হবার কারণ

ভাইরাসে আক্রান্ত হবার কারণ

১. অন্য কম্পিউটারে ব্যবহৃত সিডি, ডিস্ক ইত্যাদি নিজের কম্পিউটারে ব্যবহারের মাধ্যমে। ২. অন্য কম্পিউটার থেকে কপিকৃত সফটওয়্যার নিজের কম্পিউটারে ব্যবহারের মাধ্যমে।

৩. অন্য কম্পিউটারের কোনো ফাইল নিজের কম্পিউটারে ব্যবহারের করলে।

৪. পুরাতন ভার্সনের এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যারে মাধ্যমে।

৫. ই-মেইল আদান-প্রদানের মাধ্যমে।

৬. গেম ফাইল ব্যবহারের মাধ্যমে।
মেলওয়্যার (Malware) এ আক্রান্ত হবার লক্ষণ

কোনো কম্পিউটারে মেলওয়্যার আক্রমণ ঘটলে সেই কম্পিউটারে মেলওয়্যার আক্রমণের বেশ কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। যে কোনো ধরনের মেলওয়্যার আক্রমণ ঘটুক না কেন কম্পিউটারে তিনটি সাধারণ লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় এতে মেলওয়্যার আক্রমণ ঘটেছে কীনা। যেমন :

পিসি এর পারফরমেন্সে বিঘ্ন ঘটা যে কোনো ধরনের মেলওয়্যার কম্পিউটারে ঢুকলেই তা কম্পিউটারের পারফরমেন্সে প্রভাব ফেলবে। কোন কম্পিউটার লক্ষণীয় ভাবে ধীরগতিতে কাজ করলে বা কম্পিউটার চালু অথবা বন্ধ হতে অস্বাভাবিক সময় নিলে বুঝতে হবে ঐ কম্পিউটারে মেলওয়্যার আক্রমণ ঘটেছে। অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে সিস্টেম ক্র্যাশ করলেও বুঝতে হবে কম্পিউটারে মেলওয়্যার আক্রমণ ঘটেছে।

পিসি এর অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ : কম্পিউটারে মেলওয়্যার আক্রমণ ঘটলে কম্পিউটার নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিচিত্র আচরণ করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় না চাইতেই কম্পিউটারে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত টুলবার বা সফটওয়্যার ইনস্টল হয়ে গেছে যা চাইলেও কম্পিউটার থেকে অপসারণ করা যাচ্ছে না। কম্পিউটার অনেক বিচিত্র মেসেজ বা অফার গ্রহণের জন্য পপআপ উইন্ডো প্রদর্শন করছে। পিসি এই ধরনের আচরণ করলে বুঝতে হবে এতে মেলওয়্যার আক্রমণ ঘটেছে। আবার হোমপেজ, ডেস্কটপ বা কম্পিউটার সেটিং এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সাধিত হলে সেটিও মেইলওয়্যার আক্রমণের লক্ষণ।

ব্রাউজিং এর সময় পপ-আপ প্রদর্শন : ব্রাউজিং এর সময় বিভিন্ন পপ উইন্ডো বা অফার প্রায়শঃই ব্রাউজারে প্রদর্শিত হয়। এগুলো সাধারণত অ্যাডওয়্যার। এগুলোকে আপাতঃদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও এদের মধ্যে বেশ কিছু আছে যারা পিসিতে বিভিন্ন ক্ষতিকর মেইলওয়্যার ইনস্টল করে ফেলে ব্রাউজকারীর অজান্তেই। সুতরাং ব্রাউজিং এর সময় এই সব পপ-আপ অ্যাডগুলো থেকেও মেলওয়্যার আক্রমণ ঘটতে পারে। অনেক সময় এমন কিছু স্পাইওয়্যার থাকে যেগুলো সার্চ ইঞ্জিনের সাথে কাজ করে। ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট বা লিংক প্রদর্শিত হলে বুঝতে হবে এগুলো মেলওয়্যর বিস্তারে প্রদর্শিত হচ্ছে। কম্পিউটার ভাইরাসের ও এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যারের তালিকা

কম্পিউটার ভাইরাসের তালিকা

1. বুট সেক্টর ভাইরাস

3. বহুমুখী ভাইরাস

5. সঙ্গী ভাইরাস

4. ম্যাক্রো ভাইরাস

7. পার্টিশন ভাইরাস

6. ওভাররাইটিং ভাইরাস 8. ট্রোজান হর্স ভাইরাস

7. স্টিলথ ভাইরাস

8. কমান্ড উদ্দেশ্য ভাইরাস 11. মেমরি রেসিডেন্ট ভাইরাস

9. ডি-মাই ভ্যালেন্টাইন

10. A.I.D.S ভাইরাস

11. BUDDY LST জিপ

12. FLFBOWL.EXE

13. FULFNBX.Exe

13.পেরিন। Exe

14. Irina Virus ইত্যাদি।

এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যারের তালিকা

1. ম্যাকাফি অ্যান্টিভাইরাস

2 ড. সলোমন অ্যান্টিভাইরাস

3. নরম্যান অ্যান্টিভাইরাস

4. ভাইরাস সেফ অ্যান্টিভাইরাস

5. সেন্ট্রাল পয়েন্ট অ্যান্টিভাইরাস।

6. রেড অ্যালার্ট অ্যান্টিভাইরাস

7. সতর্ক অ্যান্টিভাইরাস

8. 12. F1 কী ভাইরাস

9. VX2000 অ্যান্টিভাইরাস

10. F-ম্যাক্রো অ্যান্টিভাইরাস

11 থান্ডার বাইট অ্যান্টিভাইরাস 8. AVG অ্যান্টিভাইরাস

12. পিসি সিলিন অ্যান্টিভাইরাস

13. 15. আইরিস অ্যান্টিভাইরাস

14. অ্যান্টিভাইরাস পরিষ্কার করুন

16রেগ ক্লিন অ্যান্টিভাইরাস

18. আভিরা অ্যান্টিভাইরাস

19 অ্যাভাস্ট অ্যান্টিভাইরাস

20. NetQin অ্যান্টিভাইরাস

21. বিটডিফেন্ডার অ্যান্টিভাইরাস

22. NOD32 Antivirus ইত্যাদি

23. পান্ডা অ্যান্টিভাইরাস 23. ক্যাসপারস্কি অ্যান্টিভাইরাস ভাইরাস ও মেলওয়্যার বিস্তার ও প্রতিরোধের উপায় ভাইরাসের বিস্তার ও প্রতিরোধের উপায়

ভাইরাসে আক্রান্ত হলে হয়ত ভাইরাস নিধন করে পিলিটিকে পুনরায় কার্যপযোগী করে তোলা যায় কিন্তু তাতে করে মূল্যবান অনেক সময় নষ্ট ছাড়াও প্রয়োজনীয় অতি মূল্যবান প্রোগ্রাম বা তথ্য ও হারিয়ে যেতে পারে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে "Prevention is always better than cure" অর্থাৎ প্রতিরোধ সব সময় প্রতিকারের চেয়ে উত্তম। তাই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিকারের চেয়ে আক্রান্ত না হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কম্পিউটার ভাইরাস থেকে পিসিকে সুরক্ষিত রাখা খুব কঠিন কাজ নয়। সাধারণ কিছু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং পূর্ব সতর্কতা নিলে ভাইরাস নামক ভয়ানক শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। নিম্নে ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার কয়েকটি উপায় নিয়ে

আলোচনা করা হলো : 1. একান্ত প্রয়োজন না হলে বাহিরের কোনো ডিস্ক বা পেনড্রাইভ (ফ্লাশডিস্ক) ব্যবহার না করা। ডিস্কের মাধ্যমেই ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছড়ায়।

2. বিশেষ প্রয়োজনে বাহিরের ডিস্কেট ব্যবহার করার আগে অবশ্যই আপডেটেড ভাইরাস স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে নেওয়া।

3. সব সময় এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারের আপডেটেড ভার্সন ব্যবহার করা।

4.প্রতিদিন কাজের শেষে প্রয়োজনীয় ডেটার ব্যাকআপ রাখা।

5. অধিকাংশ ভাইরাস সাধারণত.com এবং.exe ফাইলকে আক্রান্ত করে থাকে। তাই সব প্রোগ্রামের com এবং exe ফাইলসমূহকে Read Only করে রাখা।

6. মাঝে মাঝে এন্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করা।

7. ইন্টারনেট, বিবিএস ব্যবহারে সতর্ক হওয়া। ভাইরাস স্ক্যানিং করে ইন্টারনেট থেকে ফাইল ডাউন-লোড করা।

8. ই-মেইলের অপরিচিত এটাচমেন্ট ফাইল খোলার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। না করা।

9. অযথা অপ্রয়োজনীয় ফ্রি সফটওয়্যার কিংবা ডেমো সফটওয়্যার ব্যবহার। 10. কম্পিউটার স্টার্টআপে ভাইরাস প্রতিরক্ষক গার্ড সক্রিয় রাখা।

11. পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার না করা।

12. সম্ভব হলে বছরে অন্তত একবার ব্যবহৃত হার্ডডিস্কটি লো-লেবেল ফরম্যাট করে নতুন করে সব প্রোগ্রাম ইন্সটল

মেলওয়্যার (Malware) এ আক্রামণ হতে প্রতিকার। পিসিকে মেলওয়্যার আক্রমণ থেকে রক্ষার প্রধান উপায় হলো কম্পিউটারে সর্বদা আপগ্রেড এন্টিভাইরাস ইনস্টল করা।

প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মেলওয়্যার তৈরি হচ্ছে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে এর বিস্তার ঘটছে তাই প্রতিটি এন্টিভাইরাস অল্প সময়ের ব্যবধানে এদের নতুন নতুন আপডেট অনলাইনে রিলিজ করে। সবদা এই আপডেটগুলো অনলাইনে চেক করে নিজের এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামকে আপডেট রাখতে হবে।

1. যে কোনো পাইরেটেড সফটওয়্যার বা ত্রুটিপূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। অজানা বা অচেনা কোনো অথারের সফটওয়্যার ইনস্টলের পূর্বে এর সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবে, তা ইন্সটল করা উচিত।

2. ইন্টারনেটে ব্রাউজিং এর সময় সর্বদা এন্টি-ভাইরাস অন রাখা উচিৎ। ব্রাউজারে পপ-আপ-ব্লকার ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাডওয়্যারের বিস্তার থেকে মুক্ত থাকা যায়।

3. ইন্টারনেট থেকে কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোডের পূর্বে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তা ইনস্টল করতে হবে।

4. সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো ব্যবহারের সময় বিভিন্ন অফার, ই-মেইল, থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন নিশ্চিত না হয়ে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

উপরিউক্ত সতর্কতাগুলো অনুসরণ করলে কম্পিউটারকে মেলওয়্যার আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। ধন্যবাদ, , , , , , , , , , , , ,

Level 2

আমি মো আতিক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 13 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 5 টিউনারকে ফলো করি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জানা এবং অন্যকে শেখানোর আগ্রহ থেকেই টেকটিউনসে আমার পথচলা। আর সেই সাথে, আপনাদের জন্য প্রযুক্তিগত বিষয় গুলো সহজভাবে উপস্থাপন করার জন্য এই সাইটে যুক্ত হয়েছি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস