অ্যান্ড্রয়েড ইউজাররা যে ১০ টি কমন মিসটেক করে থাকে

Level 12
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে থাকি। আমরা প্রায় সকলেই অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করলেও, মোবাইল ব্যবহারের সময় আমাদের কিছু সাধারণ মিসটেক থেকে যায়। আর এই কমন মিসটেক থেকেই একটি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করার সময় আপনার অভিজ্ঞতা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

যদিও অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট ফোন ব্যবহার করার সহজ, তবে আপনি যদি ফোন ব্যবহারের সময় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন, তাহলে এটি আপনার ফোন অথবা আপনার ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

আর এসব ভুলগুলোর কারণে আপনার ডিভাইসের পারফরমেন্সে ও যথেষ্ট প্রভাব পড়তে পারে। তাহলে এবার চলুন জেনে নেয়া যাক, কোন কোন সাধারণ ভুলের জন্য আপনার স্মার্টফোনের পারফরম্যান্সে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আপনি যদি এখন থেকেই এসব বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেন, তাহলে আপনি ভবিষ্যতে এরকম সমস্যা এড়াতে পারবেন। আর আপনি যদি এখন থেকেই আপনার স্মার্টফোনের প্রতি এসব টিপস গুলো ফলো করতে পারেন, তাহলে আপনার মোবাইলের পারফরম্যান্স আগের চাইতে বৃদ্ধি এবং পরবর্তী দিনেও ফোনের পারফরম্যান্স অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

১. বারবার অ্যাপস Close করা এবং একই সাথে অনেকগুলো অ্যাপস চালু রাখা

অ্যাপস Close করা এবং একই সাথে অনেকগুলো অ্যাপস চালু রাখা

অনেক সময় আমরা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে চালানোর সময়, কিছু অ্যাপসকে মিনিমাইজ করে রাখি এবং একই সাথে অনেকগুলো অ্যাপ চালাই। আপনার কাছে অনেক সময় এমন মনে হতে পারে যে, একসাথে অনেকগুলো অ্যাপস মিনিমাইজ করে রাখলে এবং একটি অ্যাপস দিয়ে কাজ করলে ব্যাকগ্রাউন্ডে হয়তোবা শেষ অবস্থায় অ্যাপসগুলো অতিরিক্ত চাহিদা দখল করে রাখে এবং বেশি পাওয়ার খরচ করে। মনে রাখবেন যে, আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে একই সাথে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন এর কাজ প্রসেসিং করার জন্য একটি বিশেষ কার্যকর ব্যবস্থা রয়েছে।

আপনি যখন একই সাথে অনেকগুলো অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু করে রাখেন, তখন আপনার ডিভাইসের সিস্টেম এগুলোর সমস্তই অনেক স্মার্টভাবে ম্যানেজ করতে পারে। আর এটি আপনার ফোনের ব্যাটারির খরচও ম্যানেজ করতে পারে, এবং তাই আপনাকে এই বিষয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।

বরং, আপনি যখন একটি অ্যাপ ম্যানুয়ালি বন্ধ করবেন, তখন সেটির ফোনের মেমোরি থেকে Free করা হয় এবং পরবর্তীতে সেটি Open করতে বেশি সময় নেয়। তবে অনেক সময় আপনার লক্ষ্য হতে পারে ফোনের রিসোর্স খালি করা। কিন্তু, ফোনের রিসোর্স খালি করার জন্য এরকমটি করলেও, অনেক সময় এটি সেরকম কাজ করে না। তাই, আপনাকে যদি একসঙ্গে একাধিক অ্যাপ ওপেন করে কাজ করতে হয়, তাহলে সরাসরি অ্যাপস ক্লোজ না করে, বরং সেদিন মিনিমাইজ করে রাখুন; যা আপনার কাজকে অনেক দ্রুত করতে পারবে।

২. Fake Cleaning, Battery অথবা RAM Booster অ্যাপস ব্যবহার করা

Fake Cleaning, Battery অথবা RAM Booster অ্যাপস ব্যবহার করা

আমরা অনেক সময় মোবাইলের পারফরমেন্স বানানোর জন্য অতি উৎসাহী হয়ে যাই। আর এই উৎসাহ থেকেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য গুগল প্লে স্টোর থেকে অনেক অ্যাপ ডাউনলোড করি। Google Play Store এ এমন অনেক অ্যাপ রয়েছে, যেগুলো আপনার ফোন Clean করার দাবি করে। এছাড়াও এরকম আরো অনেক অ্যাপ রয়েছে, যেগুলো দিয়ে Battery এবং Ram বাড়ানো যাবে বলে তারা দাবি করে।

আপনিও যদি অন্যান্যদের মত এরকম Ram বা ব্যাটারি বুস্টার অ্যাপস এর সন্ধান করে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য খারাপ খবর রয়েছে। কেননা, এসব অ্যাপস গুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ভুয়া এবং প্রকৃতপক্ষে এগুলো কোন কাজই করেনা। বরং এগুলো আপনার ফোনে কাজ করার বিপরীতে, আরও ফোনের অতিরিক্ত রিসোর্স দখল এবং আপনার ফোনের পারফরম্যান্সকে চরমভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

মজার ব্যাপার হলো, তারা এসব অ্যাপস দিয়ে আপনার ফোনে উপকার করার পরিবর্তে, তারা শুধুমাত্র এগুলোতে বিজ্ঞাপণ দেখায় এবং অ্যাপের ভেতরে বিভিন্ন কিছু কেনার জন্য সাজেস্ট করে। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের জন্য বেশিরভাগ বুস্টার অ্যাপস ই মূলত অপ্রয়োজনীয়। কারণ, Android System স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এই বিষয়গুলো পরিচালনা করতে পারে।

আর, অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ব্যাটারি এবং Ram বুস্টার এর মত অ্যাপসগুলো ইন্সটল করা, বোকামি ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। কেননা, এ ধরনের অ্যাপস গুলো কোন কাজেই আসে না। বরং, এ ধরনের অ্যাপস গুলো ফোনের আরো অতিরিক্ত জায়গা দখল করে এবং ফোনকে ভারী করে তুলতে পারে।

৩. Unknown Sources থেকে অ্যাপ ইন্সটল করা

Unknown Sources থেকে অ্যাপ ইন্সটল করা

কখনো কখনো দেখা যায় যে, আপনি গুগল প্লে স্টোরে কোন অ্যাপ অথবা গেম খুঁজে পান না। আর এক্ষেত্রে আপনি অ্যাপ ডাউনলোডের ক্ষেত্রে থার্ড পার্টি কোন ওয়েবসাইট বেছে নেন এবং এজন্য আপনি গুগল ব্যবহার করে সে সমস্ত ওয়েবসাইটগুলো খুঁজে নিতে পারেন। তবে, আমরা যদি কোন একটি গুগল প্লে স্টোরে না পাই, তখন গুগলে সার্চ করে কোন ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ ডাউনলোডের ক্ষেত্রে আমরা সেই ওয়েবসাইট সম্পর্কে যাচাই করার চেষ্টা করি না।

অন্যান্যদের মতো আপনি যদি এ ধরনের থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করেন, তাহলে আপনার নিরাপত্তা এবং প্রাইভেসি হুমকির মুখে পড়তে পারে। যদিও অনেক অ্যাপ অফিসিয়াল অ্যাপ ও গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যায় না। তবে, আপনি যদি এরকম কোন অ্যাপ চান, যা গুগল প্লে স্টোরে খুঁজে পাচ্ছেন না, তাহলে আপনি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য কিছু নিরাপদ অ্যাপস ডাউনলোড ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।

কোন একটি নির্দিষ্ট ভার্সনের অ্যাপ খুঁজে নেওয়ার জন্য আপনি অবশ্যই যে কোন ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করতে যাবেন না। কেননা, এ ধরনের সাইট গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। তবে, Google Play Store এর বাহিরেও যেসব সিকিউর অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডাউনলোড করার ওয়েবসাইট রয়েছে, সেগুলো আপনার জন্য নিরাপদ।

অন্যদিকে আপনি যদি কোন একটি পেইড অ্যাপের Cracked বা Modded Version ডাউনলোড করে ইন্সটলের চেষ্টা করেন, তাহলে আপনার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাস বা স্পাইওয়্যার যুক্ত অ্যাপস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, অ্যান্ড্রয়েড ফোনে অ্যাপস ডাউনলোডের জন্য প্রথমে গুগল প্লে স্টোর ব্যবহার করুন এবং তারপর এর বিকল্প হিসেবে অন্যান্য ট্রাস্টেড ওয়েবসাইট বাছাই করুন। অ্যাপ ডাউনলোডের ক্ষেত্রে আপনি কখনোই Unknown Source থেকে ডাউনলোড করার চেষ্টা করবেন না।

৪. অ্যাপস এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে Dodgy বা স্ক্যাম বিজ্ঞাপণে ট্যাপ করা

অ্যাপস এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে Dodgy বা স্ক্যাম বিজ্ঞাপণে ট্যাপ করা

আমরা যখন অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভিজিট করি, তখন আমাদের সামনে প্রায়ই অনেক বিজ্ঞাপণ চলে আসে। যদিও, এসব ওয়েবসাইটের নির্মাতারা বিজ্ঞাপণের মাধ্যমেই বেশিরভাগ সময় আয় করে থাকে এবং এটি কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে আপনাকে এটি মাথায় রাখা জরুরী যে, এই বিজ্ঞাপণে আপনার জন্য অনেক সময় বিপজ্জনক এবং আপনার ডেটা চুরির একটি মাধ্যম হতে পারে। এছাড়াও, এ ধরনের বিজ্ঞাপণে ক্লিক করার মাধ্যমে আপনার ডিভাইসে ভাইরাস ও প্রবেশ করতে পারে।

আমরা যখন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভিজিট করি, তখন সেখানে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপণ দেখতে পাই। এসব বিজ্ঞাপণ গুলোর মধ্যে থেকে খারাপ বিজ্ঞাপণ গুলো সনাক্ত করা কিন্তু অতটা কঠিন নয়। আপনি যদি একটু লক্ষ্য করেন, তাহলে এ ধরনের স্ক্যাম বিজ্ঞাপণ গুলো সনাক্ত করতে পারবেন।

স্ক্যামারেরা সে সমস্ত বিজ্ঞাপণ গুলোকে সত্য করে আপনার সামনে উপস্থাপন করার জন্য, সেখানে একটি ভালো ডিল অফার করে অথবা আপনার ফোনের জন্য ভালো হবে এরকম কোন অ্যাপস ডাউনলোড করার জন্য সাজেস্ট করে। উদাহরণস্বরূপ, তারা আপনাকে আপনার ফোনে ভাইরাস স্ক্যানিং এর অ্যাপ ইন্সটল করার জন্য প্রলুব্ধ করতে পারে, যা আসলে ফেক।

এছাড়াও এমন ওয়েবসাইটে এমনও পপ-আপ বিজ্ঞাপণ দেখতে পাবেন যে, "আপনার ফোনে ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে, এখানে ক্লিক করে তা ডিলিট করুন"। আপনাকে এরকম পপ-আপ বিজ্ঞাপণ দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, আপনি যাতে যত দ্রুত সম্ভব সেই বিজ্ঞাপণে ক্লিক করেন। এ ধরনের বিজ্ঞাপণ গুলো মূলত স্ক্যাম, যা আপনার ফোনে আরো ভাইরাস ইন্সটল করতে পারে। তাই, অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করার সময়, ‌ কোন ওয়েবসাইট বা অ্যাপে এ ধরনের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপণে ক্লিক করবেন না। ‌ আর এখন থেকে যেন কখনোই এই বিষয়টি মিসটেক না হয়।

৫. অ্যাপসকে অপ্রয়োজনীয় Permission দেওয়া

অ্যাপসকে অপ্রয়োজনীয় Permission দেওয়া

অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করার সময় আরো একটি কমন মিসটেক হলো, বিভিন্ন অ্যাপস কে অপ্রয়োজনীয় সব Permission দেওয়া। কোন একটি অ্যাপকে নির্দিষ্ট একটি ডেটাতে পারমিশন দেওয়ার মানে হলো, সেটি আপনার ডিভাইস থেকে Data এবং Resources অ্যাক্সেস করতে পারবে। আর, এতে করে সেই অ্যাপসটি ডেটা গুলো নিয়ে যা খুশি তাই করতে পারে।

আপনি যখন কোন একটি অ্যাপ ইন্সটল করেন, তখন সেই অ্যাপসটি পপ-আপ আকারে কিছু পারমিশন চায়। উদাহরণস্বরূপ আপনি যখন একটি Photo Gallery অ্যাপ ইনস্টল করবেন, তখন এটি আপনার মোবাইলের File বা Photo অ্যাক্সেস করার জন্য অনুমতি চাইবে। একইভাবে, আপনি যদি কোন মেসেজিং অ্যাপ ইন্সটল করেন, তাহলে এটি আপনার Contact List এর অনুমতি চাইবে।

তবে, অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সমস্ত অ্যাপ ইন্সটল করার পর একই আচরণ করে না। বরং, কিছু অ্যাপস প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত আরো কিছু বিষয়ে অ্যাক্সেস চাইতে পারে, যেগুলো সেই অ্যাপের জন্য প্রয়োজনীয় নয়। উদাহরণস্বরূপ, মনে করুন আপনার ফোনে একটি ক্যালকুলেটর অ্যাপ ইন্সটল করলেন। এবার সেই ক্যালকুলেটর অ্যাপ টি যদি আপনার ফোনের Contact এবং Location এর অ্যাক্সেস চায়, তাহলে এটি সন্দেহজনক। কেননা এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় পারমিশন নিয়ে অ্যাপসটি ব্যবহারকারী সম্পর্কে Analytics করে, তাকে আরো Personalized Ads দেখাতে পারে অথবা গুপ্তচর ব্যক্তির জন্য ডাটা সংগ্রহ করতে পারে।

অতএব, কোন অ্যাপ ইন্সটল করার পর পারমিশন দেওয়ার সময় অবশ্যই সাবধানে পপ-আপ গুলো পড়তে হবে এবং আপনাকে শুধুমাত্র সেগুলোকেই অনুমতি দিতে হবে, যা সেই অ্যাপের সাথে সম্পর্কিত। আর আপনি যদি ইতিমধ্যেই আপনি ইন্সটল করে থাকেন, তাহলে সিস্টেম সেটিং থেকে সেই অ্যাপের Permission সমূহ চালু কিংবা বন্ধ করতে পারেন।

আপনার ব্যবহার করা অ্যাপটি যদি ভালো কোন ডেভলপার দিয়ে তৈরি করা না হয়, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটি অনেক পারমিশন চাইতে পারে। আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ইন্সটল থাকা অ্যাপসটি বর্তমানে কি কি পারমিশন নিয়েছে, সেটি দেখার জন্য সেটিংস থেকে Apps Permission অপশনে যান এবং তারপর প্রয়োজনীয় অপশন গুলো চালু রেখে, বাকিগুলো বন্ধ করুন। আর কোন অ্যাপস যদি তার কাজের বাহিরেও অতিরিক্ত কোন পারমিশন চায় এবং আপনি সেই অ্যাপের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে না পারেন, তাহলে আপনি চাইলে সেটির একটি বিকল্প খুঁজতে পারেন।

৬. অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে Root, Bootloader আনলক এবং Flash করা

অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে Root, Bootloader আনলক এবং Flash করা

আমরা এটি সকলেই জানি যে, অ্যান্ড্রয়েড একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। আর যে কারণে এই অপারেটিং সিস্টেমকে ব্যাপকভাবে কাস্টমাইজ করা যায়। তবে, কাস্টমাইজ করার ক্ষেত্রে এই Flexibility থাকা সত্ত্বেও, Core System এর Files গুলো অ্যাক্সেস করার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আপনি চাইলে অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করতে পারবেন এবং এজন্য আপনাকে কাস্টম রম ইন্সটল করতে হবে।

আপনি যদি আপনার ফোনের অপারেটিং সিস্টেম লেভেলে কাস্টমাইজ করতে চান, ‌তাহলে আপনার ফোনটিকে রুট করার প্রয়োজন পড়বে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা মূলত আপনার ফোনটির অপারেটিং সিস্টেম এর ফাইল অ্যাক্সেস করতে দেয়। আপনি আপনার ফোনটিকে রুট করার মাধ্যমে অনেক কিছুরই পরিবর্তন করতে পারবেন, তবে এতে করে পরবর্তীতে আপনি অনেক সমস্যার সম্মুখীন হবেন।

রুট অ্যাক্সেস এর মতই আপনার অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমের আরো একটি এলিমেন্ট লক করা রয়েছে, যাকে বুটলোডার বলা হয়; যা আপনার ফোনে অপারেটিং সিস্টেম Launching এর জন্য কাজ করে। আপনি যদি আপনার ডিভাইসে একটি কাস্টম রম ফ্ল্যাশ করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে আপনাকে এই বুটলোডারটি আনলক করতে হবে।

আপনি যদি আপনার ফোনে কাস্টম রম ইন্সটল করেন, তাহলে আপনার ডিভাইসের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কিছু ঝুঁকি রয়েছে। আপনি যদি এই বিষয়ে দক্ষ না হয়ে থাকেন, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে আপনার মোবাইলটি অচল হয়ে যেতে পারে। আর আপনি এমনটি করলে, প্রথমে ই আপনার ডিভাইসের ওয়ারেন্টি বাতিল হবে। আর আপনি যদি সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে সম্পন্ন করেন এবং আপনার ফোনে কাস্টম রম ইনস্টল করেন, তাহলেও আপনি কিছু সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন।

আর আপনি যদি আপনার ফোনটিকে নতুনভাবে সাজাতে চান এবং এর জন্য কাস্টম রম ইন্সটল করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আপনি আপনার বাড়ির অতিরিক্ত কোন ফোন দিয়ে তা পরীক্ষা করে প্রথমে ধারণা নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি যদি সফল হবে সেই ফোনটিতে যাবতীয় কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করতে সামর্থ্য হন, তাহলে আপনার নিজের অ্যান্ড্রয়েড ফোনটিতে পরবর্তীতে কাজ করতে পারেন। তবে প্রথমে শেখার জন্য আপনার মূল অ্যান্ড্রয়েড ফোনটি নষ্ট করবেন না।

৭. ফোনের ডাটা ব্যাকআপ না করা

ফোনের ডাটা ব্যাকআপ না করা

ডিফল্টভাবে অ‌্যান্ড্রয়েড ফোনে স্টোরেজের জন্য রম ব্যবহার করা হয়। অনেক ব্যবহারকারীর ইন্টারনাল মেমোরি বা রম অনেক বেশি হওয়ার কারণে, ‌তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস সমূহ এখানে সংরক্ষণ করে রাখেন। কিন্তু, অনেক সময় বা কখনো কখনো দুর্ঘটনায় আপনার ফোনের এসব ডকুমেন্টগুলো হারানো লাগতে পারে। কারণ, কখনো কখনো সিস্টেম আপডেটের ফলে এ ধরনের ডকুমেন্টসগুলো ক্র্যাশ হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও অন্য যেকোনো কারণে আপনি হয়তোবা আপনার ফোনটিকে রিসেট করার জন্য বাধ্য হতে পারেন।

কল্পনা করুন যে, যদি কখনো দুর্ঘটনা বসত আপনার ফোনটিকে ব্যবহার করার উপযোগী করতে রিসেট করার প্রয়োজন পরে, ‌ তাহলে ব্যাপারটি কেমন হবে? এক্ষেত্রে আপনি আপনার গুরুত্বপূর্ণ অনেক ফাইল হারাতে পারেন। তাই, আপনি যদি শুরু থেকেই আপনার এসব ডাটা গুলো সুরক্ষিত রাখতে চান, তাহলে বুদ্ধিমানের কাজ হিসেবে সেগুলোকে ব্যাকআপ করে রাখুন।

আপনার মেমোরিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল এবং ডকুমেন্টসমূহ নিরাপদে ব্যাকআপ করে রাখার জন্য গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আরো অনেক ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস রয়েছে, যেখানে বিনামূল্যে কয়েক জিবি পর্যন্ত ফাইল আপলোড করে রাখা যায়। আর আপনি চাইলে মোবাইলের ফটো Auto Backup করে রাখার জন্য Google Photos ব্যবহার করতে পারেন। সেই সাথে, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস গুলো গুগল ড্রাইভ সহ আরো অন্যান্য ক্লাউড স্টোরেজে আপলোড করে রাখতে পারেন।

এতে করে আপনার মোবাইলটি নষ্ট হয়ে গেলে কিংবা মোবাইলটি রিসেট করলেও, অন্য মোবাইল থেকে সেগুলো অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে শুধুমাত্র Gmail বা Email আইডি এবং পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হবে।

তাহলে, এখন থেকে নিজের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসগুলো অবশ্যই Internal মেমোরিতে রাখবেন না। ‌ যাতে কোন দুর্ঘটনাবশত আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো হারিয়ে না যায়।

৮. আপনার ফোনে Find My Device ফিচারটি কনফিগার না করা

আপনার ফোনে Find My Device ফিচারটি কনফিগার না করা

অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য Find My Device হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ সিকিউরিটি ফিচার। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফোন হারিয়ে গেলে কিংবা চুরি হয়ে গেলে ব্যবহার করা হয়। আপনার ডিভাইসটি যদি হারিয়ে যায় অথবা সেটিকে যদি খুঁজে না পান, তাহলে আপনি এই ফিশারটির মাধ্যমে খুব সহজেই দূর থেকে সেটাকে সনাক্ত করতে পারবেন।

আপনি গুগলের এই ফিচারটি ব্যবহার করার মাধ্যমে খুব সহজেই হারিয়ে যাওয়া ফোনটির অবস্থান বের করতে পারবেন এবং তা খুঁজে পেতে পারেন। Find My Device‌ ফিচারটি ব্যবহার করে লক করা স্ক্রীন ও পরিচালনা করা যায় এবং আপনি এটি ব্যবহার করে দূরবর্তী স্থান থেকে সে মোবাইলের কিছু সেটিং পরিবর্তন করতে পারবেন।

আপনি যখন বাহিরে কোথাও বেড়াতে যাবেন, তখন অবশ্যই আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের লোকেশন চালু করে রাখবেন। আর এ সময় আপনার ফোনটি যদি হারিয়ে যায়, তাহলে Find My Device ফিচারটির মাধ্যমে পরবর্তীতে ফোনটির অবস্থান খুব সহজেই সনাক্ত করবে পারবেন। আর আপনি যদি সর্বদা আপনার ডিভাইসের লোকেশন চালু করে রাখেন, তাহলে চুরি যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া ফোনটির অবস্থান খুব সহজে ট্র্যাক করা সহজ হয়।

তাই, এখন থেকে আপনি কখনো বাহিরে অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিয়ে ঘুরতে গেলে অবশ্যই ফোনের লোকেশন এবং ডেটা চালু করে রাখবেন, যাতে করে ফোন হারিয়ে গেলে খুব সহজেই খুঁজে বের করা যায়।

৯. আপনার ফোনে হয়তোবা Night Shield, Eye Comfort Shield বা Blue Light Filter ব্যবহার করছেন না

আপনার ফোনে হয়তোবা Night Shield, Eye Comfort Shield বা Blue Light Filter ব্যবহার করছেন না

বর্তমানে এই ডিজিটাল যুগে অন্যান্যদের মত আপনিও হয়তোবা বেশিরভাগ সময় মোবাইল স্ক্রিনের পেছনে ব্যয় করেন। তবে, আপনার ক্ষেত্রে এভাবে করে মোবাইলের পর্দায় বেশিরভাগ সময় ব্যয় করা চোখের জন্য নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনতে পারে। আর তাই, মোবাইলের পর্দার আলোর নেতিবাচক এবং ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য Night Shield ফিচার ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার চোখকে ক্ষতিকর আলোর প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।

বর্তমানে প্রায় সমস্ত মর্ডান অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে Built-in Night Shield ফিচার থাকে। আপনি যখন গভীর রাতে দীর্ঘক্ষণ অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করবেন, ‌তখন অবশ্যই এই অপশনটি চালু করে নেওয়া জরুরি। এটি আপনার চোখকে আলোর প্রভাব থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি, আরও দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করবে।

আর আপনার ফোনে যদি বিল্ড-ইন ভাবে Night Mode এর মত ফিচার না থাকে, তাহলে আপনি গুগল প্লে স্টোর থেকে Night Mode নামের যেকোনো একটি অ্যাপ ইন্সটল করে নিতে পারেন। এটি আপনাকে রাতে মোবাইলের পর্দার ক্ষতিকর আলোর প্রভাব থেকে অনেকাংশে রক্ষা করতে পারবে।

১০. আপনি হয়তোবা এখনো Google Assistant ব্যবহার করছেন না

আপনি হয়তোবা এখনো Google Assistant ব্যবহার করছেন না

Google Assistant হল অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য থাকা Default Virtual Assistant, যা ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে আপনার ডিভাইসের বিভিন্ন কাজ করতে সাহায্য করে। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই হয়তোবা ইতোমধ্যেই google assistant সম্পর্কে পরিচিত। আপনি যদি আপনার ডিভাইসে google assistant সেটআপ করেন, তাহলে আপনার ডিভাইসের অনেক কাজ খুব সহজেই করতে পারবেন।

Google Assistant ব্যবহার করা আপনি ‌চাইলে আপনার Schedule Meeting সেটআপ করে রাখতে পারেন, আবহাওয়ার তথ্য চেক করতে পারেন এবং এলার্ম সেট করতে পারবেন। এছাড়াও Google Assistant ব্যবহার করে প্রতিদিনের খবর দেখা, বিভিন্ন রিমাইন্ডার যুক্ত করা এবং কোন ব্যক্তিকে ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে কল করা যায়।

এই ফিচারটি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করার অভিজ্ঞতাকে একেবারে পাল্টে দিতে পারে। আপনি গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট দিয়ে অনেক কাজকে সহজ করে তুলতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি ভয়েস কমান্ড দিয়ে কোন ব্যক্তিকে কল দিতে পারবেন, অ্যাপস ওপেন করতে পারবেন এবং দূর থেকেও ভয়েসের মাধ্যমে মোবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালাতে পারবেন। আর এজন্য আপনাকে প্রথমে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট সেটআপ করে নিতে হবে। তাহলে, আজ থেকেই আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে Google Assistant ব্যবহার করুন এবং আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ব্যবহার করার অভিজ্ঞতাকে একটি নতুন মাত্রা দিন।

শেষ কথা

আপনি যদি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনটিকে ভালোভাবে উপভোগ করতে চান, তাহলে আজ থেকেই এ ধরনের মিসটেক বা ভুল গুলো এড়িয়ে চলুন। আপনি যদি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করার সময় উপরের টিপস গুলো অনুসরণ করেন, তাহলে আপনার ফোনের পারফরমেন্স এবং কর্মদক্ষতা আরো অনেক বেশি বাড়াতে পারবেন।

আর আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসটি ব্যবহার করার আগে কিছু ভুল এড়িয়ে চলেন, তাহলে আপনি আপনার ইউজার এক্সপেরিয়েন্সে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

Level 12

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 333 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 60 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস