অ্যাপস তৈরি করে টাকা ইনকাম: বিস্তারিত গাইড

স্মার্টফোনের প্রসারের সাথে সাথে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপস এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গেম খেলা থেকে শুরু করে বিল পেমেন্ট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য - প্রায় সব ক্ষেত্রেই অ্যাপসের ব্যবহার অপরিহার্য। আর এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা নতুন উপার্জনের সুযোগ তৈরি করেছে। আপনিও যদি অ্যাপস তৈরি করে টাকা ইনকাম করতে চান, তাহলে এই ব্লগ পোস্টটি আপনার জন্য। এখানে আমরা অ্যাপস তৈরির বিভিন্ন পদ্ধতি, খরচ এবং পাবলিশিং প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

১. অ্যাপস তৈরির পদ্ধতি

অ্যাপস তৈরির মূলত তিনটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে: কোড লিখে, কোড না লিখে এবং ওয়েব বেইসড অ্যাপস তৈরি করে।

ক) কোড লিখে অ্যাপস তৈরি (নেটিভ অ্যাপস)

নেটিভ অ্যাপস বলতে বোঝায় নির্দিষ্ট অপারেটিং সিস্টেম (যেমন: অ্যান্ড্রয়েড বা iOS) এর জন্য বিশেষভাবে তৈরি অ্যাপস। এই ধরনের অ্যাপস সবচেয়ে শক্তিশালী, দ্রুত এবং ফিচার-সমৃদ্ধ হয়। কোড লিখে অ্যাপস তৈরি করার জন্য কিছু প্রোগ্রামিং ভাষা শিখতে হবে এবং এর জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হলো Android Studio

  • Android Studio: অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস ডেভেলপ করার জন্য গুগল কর্তৃক ডেভেলপকৃত একটি অফিসিয়াল ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট এনভায়রনমেন্ট (IDE)। এটি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় এবং এর মাধ্যমে আপনি সম্পূর্ণ কাস্টমাইজড এবং উচ্চ-মানের অ্যাপস তৈরি করতে পারবেন।
  • প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামিং ভাষা:
    • Java: অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে এটি প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি একটি শক্তিশালী এবং বহুমুখী ভাষা।
    • Kotlin: এটি জাভার একটি আধুনিক বিকল্প এবং গুগল কর্তৃক অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপমেন্টের জন্য পছন্দনীয় ভাষা হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। এটি শিখতে সহজ এবং কম কোড লিখে বেশি কাজ করা যায়।

সুবিধা: সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স, সম্পূর্ণ কাস্টমাইজেশনের সুযোগ, ডিভাইসের সব ফিচার ব্যবহারের সুবিধা।

অসুবিধা: শেখার জন্য সময় ও শ্রম বেশি লাগে, ডেভেলপমেন্ট খরচ বেশি হতে পারে।

খ) কোড না লিখে অ্যাপস তৈরি (নো-কোড/লো-কোড প্ল্যাটফর্ম)

যদি আপনার কোডিং জ্ঞান না থাকে বা দ্রুত একটি অ্যাপ তৈরি করতে চান, তাহলে নো-কোড বা লো-কোড প্ল্যাটফর্মগুলো আপনার জন্য উপযুক্ত। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে ড্র্যাগ অ্যান্ড ড্রপ ইন্টারফেস ব্যবহার করে সহজেই অ্যাপ তৈরি করা যায়।

  • Kodular.com: এটি একটি জনপ্রিয় নো-কোড প্ল্যাটফর্ম যা গুগল এর App Inventor এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। এখানে ভিজ্যুয়াল ব্লক ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস তৈরি করা যায়।
  • Thunkable.com: এটিও একটি শক্তিশালী নো-কোড প্ল্যাটফর্ম যার সাহায্যে অ্যান্ড্রয়েড এবং iOS উভয় প্ল্যাটফর্মের জন্য অ্যাপ তৈরি করা যায়।

খরচের বিষয়: বেশিরভাগ নো-কোড প্ল্যাটফর্মের একটি ফ্রি প্ল্যান থাকে যা দিয়ে বেসিক অ্যাপ তৈরি করা যায়। তবে উন্নত ফিচার, বেশি স্টোরেজ বা কাস্টম ডোমেইন ব্যবহারের জন্য সাধারণত মাসিক বা বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হয়, যা $10 থেকে $100+ পর্যন্ত হতে পারে।

সুবিধা: কোডিং জ্ঞান লাগে না, দ্রুত অ্যাপ তৈরি করা যায়, খরচ তুলনামূলক কম (কিছু ক্ষেত্রে)।

অসুবিধা: কাস্টমাইজেশনের সুযোগ সীমিত, পারফরম্যান্স নেটিভ অ্যাপসের মতো নাও হতে পারে, প্ল্যাটফর্মের উপর নির্ভরতা।

গ) ওয়েব বেইসড অ্যাপস (PWA - Progressive Web Apps)

ওয়েব বেইসড অ্যাপস বা Progressive Web Apps (PWA) হলো ওয়েবসাইট যা অ্যাপের মতো অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এগুলি সরাসরি ব্রাউজারে চলে কিন্তু অফলাইন সাপোর্ট, পুশ নোটিফিকেশন এবং হোম স্ক্রিনে আইকন যোগ করার মতো ফিচার দিতে পারে।

  • আপনি যদি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন, তাহলে সেই ওয়েবসাইটটিকে সহজেই PWA তে রূপান্তর করতে পারেন। এর জন্য সাধারণত কিছু কোড (যেমন: সার্ভিস ওয়ার্কার) যোগ করতে হয়।
  • কোনো অতিরিক্ত খরচ নেই: আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে, তাহলে এটিকে PWA তে রূপান্তর করতে সাধারণত কোনো অতিরিক্ত খরচ লাগে না, শুধু ডেভেলপমেন্টের সময়টুকু ছাড়া।

*সুবিধা: সব প্ল্যাটফর্মে কাজ করে (যেখানে ব্রাউজার আছে), ডেভেলপমেন্ট খরচ কম, ইনস্টল করার প্রয়োজন হয় না (হোম স্ক্রিনে অ্যাড করা যায়)।

*অসুবিধা: নেটিভ অ্যাপসের মতো ডিভাইসের সব ফিচার ব্যবহারের সুযোগ থাকে না, পারফরম্যান্স কিছুটা ধীর হতে পারে।

২. অ্যাপস পাবলিশ করা এবং খরচ

অ্যাপ তৈরি হয়ে গেলে, সেটিকে ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে দিতে পাবলিশ করতে হয়। সাধারণত দুটি প্রধান অ্যাপ স্টোর রয়েছে:

ক) Google Play Store (অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস এর জন্য)

  • পাবলিশিং খরচ: Google Play Developer Account এর জন্য এককালীন $25 ফি দিতে হয়। এই ফি একবার দিলে আপনি যত খুশি অ্যাপ পাবলিশ করতে পারবেন।
  • পাবলিশ করার পর Google আপনার অ্যাপটি রিভিউ করবে এবং অনুমোদন পেলে সেটি Play Store এ লাইভ হবে।

খ) Apple App Store (iOS অ্যাপস এর জন্য)

  • পাবলিশিং খরচ: Apple Developer Program এর জন্য প্রতি বছর $99 ফি দিতে হয়।
  • Apple এর রিভিউ প্রক্রিয়া Google এর চেয়ে কঠোর হয় এবং তাদের অনুমোদন পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

৩. অ্যাপস থেকে টাকা ইনকামের উপায়

অ্যাপস থেকে টাকা ইনকামের বিভিন্ন উপায় আছে:

  • বিজ্ঞাপণ (In-App Ads): AdMob, Facebook Audience Network-এর মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অ্যাপে বিজ্ঞাপণ দেখিয়ে টাকা ইনকাম করা যায়।
  • ইন-অ্যাপ পারচেজ (In-App Purchases): অ্যাপের মধ্যে অতিরিক্ত ফিচার, ভার্চুয়াল পণ্য বা গেমের কয়েন বিক্রি করে আয় করা।
  • পেইড অ্যাপস (Paid Apps): সরাসরি অ্যাপ বিক্রি করে। ব্যবহারকারীদের অ্যাপ ডাউনলোড করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়।
  • সাবস্ক্রিপশন মডেল: মাসিক বা বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন ফি নিয়ে প্রিমিয়াম কনটেন্ট বা ফিচার ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া।
  • স্পন্সরশিপ/অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: ব্র্যান্ডের সাথে অংশীদারিত্ব করে তাদের পণ্য বা সেবা প্রচার করা।

অ্যাপস তৈরি করে সফল হওয়া সম্ভব

অ্যাপস তৈরি করে টাকা ইনকাম করাটা একটি ফলপ্রসূ উদ্যোগ হতে পারে, তবে এর জন্য সঠিক পরিকল্পনা, পরিশ্রম এবং ধৈর্য প্রয়োজন। আপনার দক্ষতা, বাজেট এবং লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে সঠিক পদ্ধতি বেছে নিন। নেটিভ অ্যাপস শক্তিশালী হলেও সময়সাপেক্ষ, নো-কোড প্ল্যাটফর্ম দ্রুত এবং সহজ, আর PWA খরচবিহীন এবং বহুমুখী। আপনার অ্যাপটি সফল হোক এবং আপনি আপনার পরিশ্রমের ফল পান, এই শুভকামনা!

Level 2

আমি ওমর ফারুক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি ওমর ফারুক। আমি প্রোগ্রামিং ভাষা শিখতে আগ্রহী এবং ইতিমধ্যে stlight(https://bdxroot.github.io/stlight/index.html) নামে একটি প্রোজেক্ট সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে আমি Barrister Sultan Ahmed Chowdhury Degree College-এ পড়াশোনা করছি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস