
একটা সময় ছিল, যখন ফোন মানে ছিল শুধু কথা বলা আর মেসেজ পাঠানো। কিন্তু এখন স্মার্টফোন আমাদের পকেট সাইজের কম্পিউটার, বিনোদনের সঙ্গী, অফিসের কাজের সহায়ক – সবকিছুই যেন এক ডিভাইসে বন্দি! আর এই বহুমুখী ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখতে আমরা কত কিছুই না করি। স্ক্রিনে দাগ পড়া থেকে বাঁচাতে গ্লাস প্রোটেক্টর, বডিও স্ক্র্যাচ (scratch) থেকে বাঁচাতে স্টাইলিশ কভার – সবই যেন মাস্ট হ্যাভ (Must-Have)।
কিন্তু একবার ভাবুন তো, আপনার ফোনের কভারটি যদি শুধু সুরক্ষা দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে, বরং আপনার স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকেই (Smartphone User Experience) সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দেয়? কেমন হয় যদি কভারটি হয়ে ওঠে আপনার ফোনের একটি এক্সটেনশন, যা নতুন সব ফিচার যোগ করে আপনার কাজকে আরও সহজ করে তোলে? টেক জায়ান্ট Apple সেই স্বপ্নকেই সত্যি করতে চলেছে! শোনা যাচ্ছে, তারা তাদের ভবিষ্যৎ iPhone Pro মডেলগুলোর জন্য এমন কিছু নিয়ে কাজ করছে, যা স্মার্টফোনের কভারের ধারণাকে সম্পূর্ণ নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আসুন, এই টিউনে আমরা সেই চমকপ্রদ খবরটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি, যা আইফোনের ভবিষ্যৎকে নতুন পথে চালিত করতে পারে।

স্মার্টফোন বাজারে কাস্টমাইজেশন এবং ফাংশনালিটি বাড়ানোর চেষ্টা নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে এসেছে। আমরা দেখেছি Modular phones-এর ধারণা, যেখানে ফোনের বিভিন্ন অংশ নিজেদের মতো করে পরিবর্তন করা যেত। আপনি চাইলে ক্যামেরা পরিবর্তন করতে পারতেন, ব্যাটারি বাড়াতে পারতেন অথবা স্পিকার আপগ্রেড করতে পারতেন। কিন্তু এই মডুলার ফোনগুলোর ধারণা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। এর প্রধান কারণ ছিল জটিলতা এবং নির্ভরযোগ্যতার অভাব। মডিউলগুলো ঠিকভাবে কাজ না করা, অতিরিক্ত ওজন এবং দাম – এই সব মিলিয়ে গ্রাহকদের মন জয় করতে পারেনি মডুলার ফোন।
আবার এমন CASE-ও খুব কম দেখা যায়, যা ফোনের ফাংশনালিটির সাথে নতুন কিছু যোগ করে। কিছু কোম্পানি চেষ্টা করেছে কভারের সাথে অতিরিক্ত ব্যাটারি যোগ করতে, আবার কেউ কেউ কিবোর্ড (keyboard) জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই CASE গুলো তেমন একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। কেন এমনটা হলো? কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই CASE গুলো ছিল ব্যবহার করা কঠিন এবং দেখতেও খুব একটা আকর্ষণীয় ছিল না।
তবে এবার দৃশ্যপট বদলাতে চলেছে! বিশ্বস্ত সূত্র, Leakster Instant Digital জানাচ্ছে, "Apple ভবিষ্যতে Official Protective CASES-এর উপর অনেক বেশি বিনিয়োগ করবে"। তার মানে বুঝতেই পারছেন, Apple শুধু সাধারণ কভার বানাচ্ছে না; তারা এমন কিছু তৈরি করতে চাইছে, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে (User Experience) সম্পূর্ণ নতুন একটা স্তরে নিয়ে যাবে। এটা যেন শুধু কভার নয়, একটা পুরো ইকোসিস্টেম (Ecosystem) তৈরি করার চেষ্টা! Apple চাইছে এমন একটা Seamless Integration তৈরি করতে, যেখানে কভারটি ফোনের সাথে মিশে গিয়ে কাজ করবে এবং ব্যবহারকারীকে দেবে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

সবচেয়ে আগ্রহ উদ্দীপক বিষয় হলো, এই "Second Touch Interfaces" জিনিসটা আসলে কী? এই Interface-টা কীভাবে কাজ করবে? কী কী Feature থাকতে পারে? এই প্রশ্নগুলো এখন টেক প্রেমীদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এটা কি LG আর Asus-এর মতো ফোনের পেছনে পুরো একটা Touch Screen জুড়ে দেওয়া হবে? তেমনটা মনে হয় না। কারণ, Apple সবসময় চেষ্টা করে তাদের ডিজাইনকে Elegant এবং Simplified রাখতে। তারা এমন কিছু তৈরি করতে চায়, যা দেখতে সুন্দর হবে এবং ব্যবহার করাও সহজ হবে। অতিরিক্ত স্ক্রিন জুড়ে দিলে ফোনের ওজন বেড়ে যেতে পারে এবং ব্যাটারি লাইফও কমে যেতে পারে। তাই Apple হয়তো অন্য কোনো Approach নেবে।
অন্যদিকে, iPad Keyboard Covers-এর মতো Touch Pad-ও হতে পারে। এই Touch Pad ব্যবহার করে স্ক্রিনে না টাচ করেই বিভিন্ন কাজ করা যেতে পারে। যেমন, আপনি যদি একটি Long Article পড়ছেন, তাহলে Touch Pad ব্যবহার করে সহজেই স্ক্রল (Scroll) করতে পারবেন। অথবা, গেম (Game) খেলার সময় Touch Pad ব্যবহার করে ফোনের কন্ট্রোল (Control) আরও সহজে নিতে পারবেন।
কিন্তু সত্যি বলতে, Leakster Instant Digital নিজেও এই বিষয়ে তেমন কিছু খোলসা করে বলেননি। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে Apple-এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার, Apple শুধু সুরক্ষার কথা ভাবছে না। তারা চাইছে CASES-এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা যেন আরও সহজে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে ফোন ব্যবহার করতে পারেন। এটা যেন ফোনের সাথে ব্যবহারকারীর সংযোগকে আরও গভীর করার একটা প্রচেষ্টা।
আসুন, একটু মনে করিয়ে দেই, LG এবং Asus তাদের কিছু ফোনে কী ধরনের চেষ্টা করেছিল:
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এই ফোনগুলো Commercial Success পায়নি। এখন দেখার বিষয়, Apple কী নতুনত্ব নিয়ে আসে। তারা কি এই পুরোনো ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেবে, নাকি সম্পূর্ণ নতুন কিছু করে দেখাবে?

দেখে মনে হচ্ছে, Apple-এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো iPhone Pros-এ নতুন কিছু Feature যোগ করে সেগুলোকে আরও "Pro" করে তোলা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কী সেই Featureগুলো? Apple কি ক্যামেরার উপর Focus করবে, নাকি প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর দিকে নজর দেবে, নাকি গেমিংয়ের জন্য বিশেষ কিছু আনবে?
আমরা জানি, iPhones-এ ইতিমধ্যেই Camera Control নামে একটি Capacitive Touch Area রয়েছে। এটা দিয়ে ছবি তোলার সময় জুম (Zoom) করা বা ফোকাস (Focus) পরিবর্তন করার মতো কিছু কাজ করা যায়। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, এটা খুব একটা Popular-ও হয়নি। কারণ, হয়তো এর ব্যবহারটা ততটা Intuitive (সহজবোধ্য) নয়। অনেকে হয়তো জানেই না যে এই Feature-টা ফোনে আছে।
তাই Apple এমন কিছু আনতে চাইছে, যা আরও বেশি User-Friendly হবে এবং যা ব্যবহার করে মানুষ সত্যিই উপকৃত হবে। হয়তো Cases-এর মাধ্যমে Shortcut তৈরি করা যাবে, যা দিয়ে এক ক্লিকেই নির্দিষ্ট Application খোলা বা কোনো Function Activate করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো একটি Case ব্যবহার করে সরাসরি ক্যামেরা চালু করতে পারবেন, অথবা আপনার পছন্দের মিউজিক প্লেলিস্ট (Music Playlist) শুরু করতে পারবেন।
এছাড়াও, Apple হয়তো এমন কিছু Feature আনতে পারে, যা বিশেষভাবে Content Creator-দের (কনটেন্ট ক্রিয়েটর) জন্য তৈরি করা হবে। যেমন, ভিডিও এডিটিংয়ের (Video Editing) জন্য বিশেষ কন্ট্রোল (Control) অথবা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের (Live Streaming) জন্য কাস্টমাইজড (Customized) অপশন।

এই নতুন Case প্রযুক্তি Apple-কে তাদের ফোন থেকে Physical Keys সরিয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে। বেশ কয়েক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছে Apple নাকি এমন কিছু করার কথা ভাবছে। Volume Button, Power Button, Mute Switch – এই সব বাটন সরিয়ে ফেললে ফোনের ডিজাইন আরও Seamless (মসৃণ) হবে, তাই না? বাটন না থাকলে ফোনের বডি আরও পরিষ্কার এবং মিনিমালিস্টিক (Minimalistic) লাগবে। Cases-এর মাধ্যমে Input দেওয়ার ব্যবস্থা করলে ফোনের বডিতে বাটন রাখার প্রয়োজনই পড়বে না।
বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে, যদি আমরা Apple-এর একটি Patent দেখি। Patent-টির Title হলো "Case with Input for Electronic Device"। সেখানে বলা হয়েছে: "উদাহরণস্বরূপ, একটি Case একটি Electromechanical Touch Sensor দিতে পারে, যা User-কে এমন একটি Input Mechanism দেবে, যেখানে Electronic Device-এর Button Press করার দরকার হবে না। Device টি যদি বুঝতে পারে যে Case লাগানো আছে, তাহলে এক বা একাধিক Button Disable করে দিতে পারে। আর Case থেকে Signal পেলে সেই Buttonগুলোর কাজ করতে পারবে। "
একটু কল্পনা করুন, কভার থেকেই ভলিউম (Volume) বাড়ানো-কমানো, স্ক্রিনশট (Screenshot) নেওয়া, Siri Activate করা বা পছন্দের Application খোলা যাচ্ছে! স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাটাই (smartphone Using Experience) সম্পূর্ণ বদলে যাবে, তাই না?
তবে বাটন সরিয়ে ফেললে কিছু সমস্যাও হতে পারে। অনেক ব্যবহারকারী Physical Button-এর Tactile Feedback (স্পর্শ অনুভূতি) পছন্দ করেন। বাটন না থাকলে ভুল করে অন্য Function Activate হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যেতে পারে। Apple-কে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে ডিজাইন করতে হবে, যাতে ব্যবহারকারীরা কোনো সমস্যায় না পড়েন।

যারা নতুন iPhone Pro মডেলের জন্য অপেক্ষা করছেন, তাদের জন্য একটা খবর আছে। Rumor অনুযায়ী, ২০২৬ সালের Fall-এ এই নতুন ফোনগুলো বাজারে আসতে পারে। তবে Vanilla Modelটির জন্য হয়তো আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে; সেটি Unveil করা হতে পারে তার ছয় মাস পর।
তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, এগুলো সবই Rumor এবং Speculation (অনুমান)। Apple সাধারণত তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে খুব একটা মুখ খোলে না। তাই যতক্ষণ না পর্যন্ত Apple নিজে কিছু ঘোষণা করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
কিন্তু যদি এই Rumor সত্যি হয়, তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি যে Apple সত্যিই স্মার্টফোন কভারের ধারণাকে নতুন রূপ দিতে চলেছে। তারা এমন কিছু তৈরি করতে চাইছে, যা শুধু ফোনের সুরক্ষা দেবে না, বরং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করবে।
পরিশেষে, Apple-এর এই নতুন উদ্যোগ নিয়ে আপনি কী ভাবছেন? এই ধরনের Case কি সত্যিই স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করতে পারবে? নাকি এটা শুধু একটা Gimmick (লোক দেখানো বিষয়) হবে?
আপনার মতামত টিউমেন্ট করে জানাতে পারেন! আর টেকনোলজি দুনিয়ার নতুন সব টিউন পেতে চোখ রাখুন টেকটিউনসে। টেকটিউনস টেকবুম সবসময় চেষ্টা করে আপনাদের কাছে সবচেয়ে Update টিউন পৌঁছে দিতে। টেকটিউনসের সাথেই থাকুন!
-
টেকটিউনস টেকবুম
আমি টেকটিউনস টেকবুম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1061 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।